চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসার ক্লাশ আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে সোমবার এ আদেশ দেন।
ঈদের ছুটির পর এক সপ্তাহ বন্ধ রেখে শনিবার থেকে খুলেছে স্কুল কলেজ। দেশব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খোলায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বহু শিক্ষার্থী গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বেশ কয়েকজন মারাও গেছে। এমতাবস্থায় তাপদাহের মধ্যে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা খোলা রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আজকের আদেশে আদালত বলেছেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) রয়েছে সেগুলোতে যথারীতি পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে। এছাড়া যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার দিন ধার্য করা থাকে সেক্ষেত্রে সিডিউল অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান জামান আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, শ্রেণিকক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা এসি নেই, তীব্র গরমের কারণে এ ধরনের প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলো বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অন্যদিকে কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার দিন ধার্য থাকলে নির্ধারিত সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া যাবে বলেও জানান এ আইনজীবী।
গতকাল শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান নওফেল জানিয়েছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে না। যেসব এলাকায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি সেখানে স্থানীয় উপজেলা শিক্ষা অফিস ও স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে স্কুল মাদরাসা বন্ধ রাখবে।
নওফেল বলেন, আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায় পাঁচটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০–এর পর্যায়ে আছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বাংলাদেশে নতুন নয়। সুতরাং পাঁচটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০-এর ওপরে যাওয়ার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। ঢাকা শহরের তাপমাত্রা বিবেচনা করে সারা দেশের বিদ্যালয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। জনপ্রিয়তার আলোকে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। বাস্তবতার নিরিখে নিতে হবে। ঢাকা শহরের তাপমাত্রা সারা দেশের তাপমাত্রা নয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছু হলেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার আলোচনা কেন? সবকিছু খোলা থাকবে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, এ প্রত্যাশা যথাযথ নয়। মন্ত্রী জানান, তারা শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে চান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কয়েকটি জেলায় সেখানে যদি অসহনীয় পর্যায়ে যায়, বিদ্যালয় সেখানে নিজস্ব পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি বা তারও বেশি বা প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ হলে করণীয় বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও একটি নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেটি তারাও সমন্বয় করেন। এলাকাভিত্তিক যদি ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা যায়, তাহলে সেখানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন, তারা আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনা করে সেই জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারেন এবং সময়সীমাও পরিবর্তন করতে পারেন। এটা অঞ্চল ভেদে।