বিদেশ থেকে খুব শিগগিরই মানুষ বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশ থেকে রোগী বিদেশে না গিয়ে বিদেশ থেকে রোগী আসবে এদেশে চিকিৎসা নিতে। সেই অবস্থা একদিন আমরা করব।’
শনিবার (৬ জুলাই) সকালে চটগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
চমেক হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সভায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা থাকা সত্বেও অনেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশেই চিকিৎসা করান। প্রধান বিদেশ যান না।
গত ঈদের আগেও তিনি দেশে চিকিৎসা করান। এভাবে আমাদের সংসদ সদস্যরা যার যার এলাকায় হাসপাতালে গিয়ে যদি চেকআপ করান তাহলে হাসপাতালে চিকিৎসার মান আরো উন্নত হবে। দেশের চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। মানুষ বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করানোর প্রবণতাও কমে আসবে।
’
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে তৈরি করা একটি মডেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখানো কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যখাত নিয়ে প্রেজেন্টেশন প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সেখানে বিস্তারিত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা যে প্রসিডিওর, মডেল তৈরি করেছি সেটা অনুযায়ী কাজ করতে পারলে স্বাস্থ্যখাতে ভালো কিছু হবে। দেশের চিকিৎসার মান উন্নত করতে আপনারা (চিকিৎসক) আমাকে সহযোগিতা করুন। দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে না গিয়ে বিদেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য দেশে আসবে।
’
এরআগে চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও চিকিৎসকরা লোকবল সংকটের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকা এবং আরো বিভিন্ন সমস্যার কথা মন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় তাৎক্ষণিক এসব প্রশ্নের উত্তর দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই মেশিন ও সিটি স্ক্যান নষ্ট এটা শুনতেও আমার কাছে খারাপ লাগে। ঢাকার পর চট্টগ্রাম বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এগুলো জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করার জন্য প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার আমি করব।’ এ ছাড়া আরো যেসব সমস্যা আছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
নিউরোসার্জারী বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. রবিউল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেনচমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন, চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার, নিউরোলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান, রেডিওলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার, রেডিওথেরাপী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ প্রমুখ। এ ছাড়া মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. ইফতেকার আহমেদ, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম প্রমুখ।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা ঢাকায় চলে যেতে চায় উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, গাইনির চিকিৎসকদের সবাই যদি ঢাকায় যেতে চায় তাহলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চলবে কেমন করে? এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা অনুশাসন দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, যার যেখানে পোস্টিং তার সেখানেই চাকরি করতে হবে। কেউ যদি যেতে না চায় বা আসতে না চায় তাহলে তাকে বলবা চাকরি ছেড়ে দিতে। যাকে যেখানে পোস্টিং দেওয়া হবে সেখানে তাকে যেতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রোগী যাতে যথাযথ চিকিৎসা পায় সেটা দেখা যেমন আমার দায়িত্ব তেমনি চিকিৎসকরাও যাতে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে সুরক্ষা পায় সেটা দেখাও আমার দায়িত্ব। চিকিৎসক সুরক্ষা ও মানসম্মত চিকিৎসা আমার টপ পাইওরিটি। রোগী ও ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বটা আমার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ১৫০ শষ্যা বিশিষ্ট চমেক হাসপাতালের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিটের সাইট পরিদর্শন করে বলেন, চলতি মাসের শেষ দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব। তারা (চায়না) কমিটেড যে দেড় বছর থেকে দুই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করবে। তারা এও বলেছেন দুই বছর সময় নাও লাগতে পারে। দেড় বছরের মধ্যে তারা কাজ শেষ করবেন।
এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী চমেক হাসপাতালের ইউরোলজি, পেডিয়াট্রিক, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন করার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব বিভাগে ভর্তি করা শিশু রোগী এবং তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ দিকে চমেক হাসপাতালের পর দুপুরে ডা. সামন্ত লাল সেন চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনে গিয়ে রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।