
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনা কন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, দুর্নীতির মাধ্যমে আঞ্চলিক পরিচালকের এ পদটি বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।
গতকাল শনিবার ব্রিটেনের স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলামের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালকের পদটিতে নিয়োগে মায়ের ক্ষমতা ব্যবহার করেন পুতুল। যদিও এর জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা তার ছিল না।
পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, পুতুলের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। চিঠিতে ডব্লিউএইচওর পদ থেকে পুতুলকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংস্থাটির ওপর চাপ প্রয়োগের দাবি জানানো হয়।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনা তার মেয়ের প্রোফাইল ভারী করতে অযাচিতভাবে তার ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। ২০২৩ সালে ভারতে জি-২০ সম্মেলনে বিনা প্রয়োজনে পুতুলকে সফরসঙ্গী করেছেন হাসিনা।
গত ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কমিটির নীতিমালার ৪৯ নম্বর নীতি অনুযায়ী, আঞ্চলিক পরিচালক পদপ্রার্থীদের জন্য জনস্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করার শক্তিশালী প্রেক্ষাপট, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজের বিস্তর অভিজ্ঞতা এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে কাজের নেতৃত্বের প্রমাণ থাকতে হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের এমএসসি ডিগ্রি রয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ে তার আর কোনো অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা নেই। ২০২৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনারারি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
বৈশ্বিক স্বাস্থ্যবিষয়ে তার অভিজ্ঞতা অটিজম ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী থাকা নেপালের সম্ভু প্রসাদ আচারিয়ার ডব্লিউএইচওর সঙ্গের কাজের ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়াও জনস্বাস্থ্যের ওপর তিনি পিএইচডি করেছেন।
ডব্লিউএইচওর সাবেক পরিচালক ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিষয়ের অধ্যাপক মুকেশ কপিলা দ্য ল্যানসেটকে বলেন, ‘দুদকে তার নিয়োগের বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত করার অধিকার রয়েছে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কাশ্মীরের হেলথ সার্ভিসের সাবেক ডাইরেক্টর জেনারেল সালিম উর রহমান বলেন, আঞ্চলিক পরিচালকদের জনস্বাস্থ্য বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নেতৃত্বের প্রমাণ থাকা আবশ্যক।
তিনি বলেন, ‘অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনতে এবং আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়গুলো নির্দেশ করতে এ যোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ।’
ডব্লিউএইচওর সদস্য দেশগুলো থেকে আঞ্চলিক পরিচালক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করা হয়। এরপর আঞ্চলিক কমিটির প্রাইভেট অধিবেশনে প্রার্থীরা তাদের যোগ্যতা উপস্থাপন করেন। পরে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে মনোনীত প্রার্থী বাছাই করা হয়। মনোনীত প্রার্থীকে এরপর ডব্লিউএইচওর এক্সিকিউটিভ বোর্ড থেকে পদের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।
তবে নিয়োগের এ প্রক্রিয়ার সংস্কার হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নেপালের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রিতা থাপা দ্য ল্যানসেটকে বলেন, পদপ্রার্থীর চিকিৎসাবিষয়ে মৌলিক ধারণা, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিস্তর পেশাগত অভিজ্ঞতা ও প্রমাণিত নেতৃত্বের যোগ্যতা নিশ্চিত করতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে ডব্লিউএইচওর আবশ্যিকভাবে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
এ বিষয়ে ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র তারিক ইয়াসারেভিচ জানান, যখন ডব্লিউএইচওর নিয়োগের বিষয়ে কোন সদস্য রাষ্ট্র অনিয়মের অভিযোগ করে, তবে ওই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই তদন্ত করাই যুক্তিযুক্ত। তদন্ত চলাকালীন সময়ে ওই বিষয়ে ডব্লিউএইচও কোনো মন্তব্য করে না।
অন্যদিকে ল্যানসেট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।