৬ আগষ্ট হতাহতের ঘটনা ও
হেফাজতে ইসলাম প্রতিনিধি দলের কারাগার পরিদর্শন।
৬ আগস্ট কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় ।কারারক্ষী ও সেনাসদস্যদের গুলিতে ঘটে হতাহতের ঘটনা । কারাগার থেকে পালিয়ে যায় দুইশতাধিক বন্দি । ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে যখন জনমানসে সত্য-মিথ্যা নানা রকম সংবাদ চাউর হতে থাকে এবং ছড়াতে থাকে নানারকম গুজব, ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে মানুষের মধ্যে, সেই সময়ে কিছু নওজোয়ান আলেম কারাগার অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেন । এহেন পরিস্থিতিতে কারাকর্তৃপক্ষ বিষয়টির সুরাহার লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলামের স্মরণাপন্ন হন। উদ্ভূতপরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলামের চলমান এক জরূরী বৈঠক থেকে লংমার্চের আহ্বায়ক মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবীকে ডেকে নিয়ে তার সাথে আলোচনা করা হয় । আলোচনার পর কারাকর্তৃপক্ষের নিকট নিম্নোক্ত পাঁচ দফা দাবি পেশ করা হয় ।
১)হতাহতের সঠিক পরসংখ্যান জানাতে হবে ।
২)তাদের ক্ষতিপুরণ ও আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ।
৩)নিরপেক্ষ তদন্ত স্বাপেক্ষে দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪)পরবর্তিতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো বন্দিকে হয়রানী করা যাবে না।
৫)আলেমদের একটি প্রতিনিধি দলসহ হাইসিকিউরিটি কারাগার পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
কারাকর্তৃপক্ষ হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়ার প্রেক্ষিতে গুনবী সাহেবকে লংমার্চ স্থগিত করতে বলা হয় এবং তিনি এক ঘোষণার মাধ্যমে তা স্থগিত করেন । পর দিন হেফাজতের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল উর্ধতন কারাকর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে দাবি আদায়ের উদ্যোগ গ্রহন করে । আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় । অন্যান্য দাবিগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কারাগার পরিদর্শনে যাওয়ারও ব্যবস্থা হয় । ইত্যবসরে সর্বপ্রধান কারাকর্তৃপক্ষ আই জি প্রিজনস পদে রদবদল হয়ে যায়। এ জন্য পরিদর্শনের বিষয়টি পিছিয়ে ১৭ই আগষ্ট নির্ধারিত হয় । সে মতে আজ দুপুর ১২ টায় হেফাজতে ইসলামের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উর্ধতন কারাকর্তৃপক্ষসহ কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন । প্রতিনিধি দলে ছিলাম আমি মুহাম্মাদ মামুনুল হক, মাওলানা মুনীর হোসাইন কাসেমী, মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী ও মুফতী বশীরুল্লাহ ।
আমরা কারাগারের বিভিন্ন ভবনে গিয়ে বন্দিদের সাথে সরাসরি কথা বলি । বন্দিরা তাদের সকল সুবিধা-অসুবিধার কথা খোলামেলা বলেন । ৬ আগষ্টের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণও প্রদান করেন । বন্দিদের বক্তব্যে ঘটনার যে বিবরণ ফুটে উঠেছে তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় নিম্নরূপ-
১)৬আগষ্ট কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও উত্তেজনা ছড়ানোর পিছনে মূল ভূমিকা ছিল জেলপলাতক আত্মসমর্পনকারীসহ নরসিংদী জেলের কয়েকশত বন্দি ।ইসলামপন্থী বন্দিদের এতে কোনো ভূমিকা ছিলনা।
২)কারাগারের দায়িত্বরত কয়েদীদের একটি দল উত্তেজিত বন্দিদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ।কারারক্ষীদের দাঙ্গাদমন বাহিনীও উত্তেজিত বন্দিদের উপর হামলা চালায় । এ সংঘাতের মাঝ খানে পড়ে একজন আলেম মারাত্মক আহত হন । তবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিবৃত্ত করায় সংঘাত বেশি দূর গড়ায়নি ।
৩)নরসিংদীর বন্দিরাই কারাগারের দেয়াল ভেঙ্গে বের হতে থাকে ।তখন দেয়ালের ছিদ্র দিয়ে কারারক্ষীরা এলোপাতাড়ী গুলি ছুড়লে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু নিরীহ বন্দি নিহত হয় । এ ছাড়া পাগলা ঘন্টি বাজিয়েও কারারক্ষীরা গুলি ছোড়ে । এতে ৬ জন বন্দি নিহত হন ।
৪)একজন স্বনামধণ্য আলেমসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ বন্দি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আগেই বন্দিদেরকে, বিশেষত ইসলামী ভাবধারার বন্দিদেরকে বিশৃঙ্খলায় না জড়িয়ে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন । তবে এ ক্ষেত্রে তৎকালীন জেলসুপারের ভূমিকার কিছু সমালোচনা করেন কেউ কেউ । ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, জেল পালানো কিংবা সংঘাত কোনোটাতেই ইসলামী অনুশাসন পালনকারী দ্বীনদার বন্দিগণ জড়িত হননি । আর তাই হতাহতদের মধ্যেও তারা বেশি হারে নেই । দুর্ঘটনাবশত কিংবা সংঘাতের মধ্যে পড়ে গিয়ে তাদের কেউ কেউ হতাহত হয়েছেন ।
৫)বন্দিরা আমাদের কাছে তাদের কিছু অসুবিধার কথা ব্যক্ত করেছেন, যেগুলো দ্রূতই সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ ।
৬) বিশৃঙ্খলার পরে ইসলামপন্থী কাউকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে সবাই জানিয়েছে। অথচ বাইরে বিষয়টি ভিন্নভাবে প্রচারিত হওয়ায় জেলগেটে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিঃদ্রঃ মুক্তির প্রক্রিয়া জেলপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নয়, বরং তা নিতান্তই আদালত ও প্রশাসন কিংবা সরকারের উর্ধতন মহলের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় । তাই এই প্রসঙ্গে সে আলোচনা আসে নি ।