দীর্ঘদিন ধরেই মাঠপর্যায়ের প্রত্যাশা ছিল—ইসলামপন্থী দলগুলো একসাথে কাজ করুক। সাধারণ মানুষের কণ্ঠে শোনা যেত, “আপনারা এক হয়ে আসেন, আমরা আপনাদের সাথেই থাকব।” ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রথম সারির ইসলামী দলগুলোর যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা সেই জনমানুষের বহুদিনের প্রত্যাশাকে পূর্ণতা দিয়েছে
রাষ্ট্র ও রাজনীতি বিশাল একটি পরিসর। পরিসর যত বড় হয়, ততই প্রয়োজন হয় উদারতা, ছাড় দেয়ার মানসিকতা এবং বৃহৎ লক্ষ্যকে সামনে রাখার অপরিহার্যতা। ইসলামের বিধানও এই উদারতার গুরুত্ব দেয়; যেমন, বৃহত্তর জনসমাবেশে ঈদের জামাআতে কোনো ভুল হলে সাহু সিজদা দিতে হয় না, যা বৃহৎ পরিসরে সম্মিলিত কাজের ফ্লেক্সিবিলিটির উদাহরণ।
ঐক্য কখনোই বিরোধ বা মতানৈক্যকে সামনে এনে প্রতিষ্ঠিত হয় না। বরং, ঐক্যমতের পয়েন্ট বা সাধারণ ভিত্তিকে সামনে এনে সম্মিলিতভাবে কাজ শুরু করতে হয় এবং সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে অবশিষ্ট মতভেদগুলো আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা হয়। এই নীতিই কোরআনে নির্দেশিত হয়েছে, সেই কারণেই আল্লাহ তাআলা রাসুল ﷺ-কে শিক্ষা দিয়েছেন:
“হে নবী, বলুন—হে আহলে কিতাব, এসো এমন একটি কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে অভিন্ন…”
ধর্মীয় দল-উপদল এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দেশের মানুষ যেখানে একরকম হতাশ ছিল, বর্তমান ঐক্যের পরিবেশ সারাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং ইসলামের পক্ষে এক গণজাগরণ সৃষ্টি করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশে গণমানুষের উপচে পড়া ভিড় এই উত্থানের সুস্পষ্ট প্রমাণ। এটি দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
স্বাভাবিকভাবেই, ইসলামী দলগুলোর এই সংগঠিত উত্থান একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিশেষত যারা খুব সহজে ক্ষমতায় যাওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখছিলেন, তারা এখন নড়েচড়ে বসেছেন। পাশাপাশি, যারা অন্যের ওপর ভর করে 'তেলেসমাতি'র মাধ্যমে এমপি হতে চেয়েছিলেন, তারাও হতাশ হয়েছেন। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ায় এই মহলটি এখন সমালোচনামুখর ও তৎপর হয়ে উঠেছে। তবে, এই ধরনের লাগামহীন বিদ্বেষপূর্ণ প্রচার-প্রচারণা তাদের নিজেদেরই ক্ষতি করবে এতে তাদের লাভ তো কিছুই হবে না; বরং আম-ছালা দুটোই হারানো—এটাই তাদের পরিণতি হতে যাচ্ছে।
ঐক্যের বরকত অনস্বীকার্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের শক্তি ও উন্নতির জন্য দুটি মূলনীতি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন—
এক: আল্লাহভীতি (তাকওয়া)
দুই: পারস্পরিক ঐক্য
মুসলিমরা যখন ইসলামের আদর্শের ভিত্তিতে নৈতিকতার সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন তাদেরকে পরাজিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। এই ঐক্যই তাদের অজেয় শক্তিতে পরিণত করে।
দেশের রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর এই সুসংগঠিত পদক্ষেপ ও গণমানুষের সমর্থন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই ঐক্য যদি ধরে রাখা যায় এবং আরও মজবুত করা যায়, তবে আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ কিছু অর্জিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়।