এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ মাহদীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি
'এনসিপি নাস্তিকদের সংগঠন’—এমন ফতোয়া দিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ মাহদীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাতে লালবাগ মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন আশরাফ মাহদী নিজেই।
এ নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্ট তিনি বলেন, ‘লালবাগ মাদরাসা থেকে আমাকে অব্যাহতির সংবাদ পেলাম। কারণ হিসেবে বলা হলো, এনসিপি নাস্তিকদের সংগঠন। আজ দুপুরে লালবাগ মাদরাসার মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ সাহেব আমাকে ফোনকলে জানালেন, গত সোমবার (২০ অক্টোবর) জরুরি মজলিসে শুরার বৈঠক থেকে মাদরাসা থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি সবিনয়ে অব্যাহতির কারণ জানতে চাইলাম, হুজুর বললেন, সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ তিনিও জানেন না। তবে শুরার দুজন শিক্ষক কারণ হিসেবে দুটি বিষয় করে অব্যাহতির ব্যাপারে খুব জোর দিয়েছেন।
১. তুমি ছাত্রদের বেয়াদব বলেছো। তাই ছাত্ররা তোমার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। তোমাকে বহিষ্কার না করলে ছাত্র আন্দোলন থামানো যাবে না। (উল্লেখ্য, যেটাকে তারা ছাত্র আন্দোলন বলছে সেটা নিছক ১৫-২০ জন ছাত্রের হৈ-হুল্লোড়। এটাকে পুঁজি করে যারা সিদ্ধান্ত নিতে মরিয়া হয়ে উঠল, তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক।’
‘আর আমি ছাত্রদের বেয়াদব বলিনি। উস্তাদদের সামনে তাদের বহিষ্কারের স্লোগান দেওয়া এবং সব উস্তাদ মিলে বারবার অনুরোধ করার পরও শান্ত না হওয়াকে বেয়াদবি বলেছি। আর যদি বেয়াদব বলেও থাকি, এটা কি মাদরাসা থেকে বহিষ্কারযোগ্য অপরাধ!)
২. তুমি এনসিপি করো। এনসিপি নাস্তিকদের সংগঠন। এটা করা জায়েজ নেই। মাদরাসার কোনো শিক্ষক এনসিপি করতে পারে না। (মনে হলো, আমার অব্যাহতি চাওয়া দুই শিক্ষকের কাছে আসল কারণ। কারণ এই দুই শিক্ষকের একজন আমাকে কিছুদিন আগে ডেকে বলেছিলেন, এনসিপি করা জায়েজ নেই। আমি উনাকে বললাম, জায়েজ না হওয়ার সপক্ষে কুরআন-সুন্নাহ থেকে দলিল দেন। তিনি দিতে পারেননি।)’
তিনি বলেন, ‘মুহিব্বুল্লাহ সাহেব হুজুরের কথা শুনে আমি কিছুক্ষণের জন্য ঘোরের মধ্যে পড়ে যাই। এসবও কি একজন শিক্ষককে বহিষ্কার করার কারণ হতে পারে! এনসিপি করা যদি অপরাধ হয় তাহলে সেটার জন্য আমাকে সতর্ক করা যেত। ফোন রাখার আগে বিনয়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করি, হুজুর! আমাকে মাদরাসা থেকে যে অব্যাহতি পত্রটা দেওয়া হবে সেখানে কি এই কারণগুলো উল্লেখ করা যাবে? হুজুর বললেন, তোমার ব্যাপারটা সেনসেটিভ। এই বিষয়ে আমরা কোনো পত্র দিতে চাই না। তুমি পত্র চাইলে মজলিসে শুরা বরাবর আবেদন করতে পারো।’
আশরাফ মাহদী আরও বলেন, ‘অন্য সূত্রে জানতে পারলাম, আমার অব্যাহতির পর কোনো প্রকার কারণ দর্শানো ছাড়াই পরিকল্পিতভাবে লালবাগ জামেয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা জসিম উদ্দিন সাহেবকে অব্যাহতি দেওয়ার আওয়াজ উঠানো হয়। শেষ পর্যন্ত অব্যাহতি দিতে ব্যর্থ হয়ে প্রশাসনিক সব দায়িত্ব নিয়ে নেয় মাওলানা জসিম সাহেবের থেকে। অথচ আমার আব্বা মাওলানা জসিম সাহেব ফ্যাসিবাদ আমলে পিঠে ছুরিকাঘাতের শিকার হন। ২০২১ সালে হাসিনার বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জোরালো বক্তব্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের দোসরদের রোষানলে পড়েছিলেন। মাদরাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। জানি না, ২৪-এর পর এসেও কোন হীন স্বার্থ বা নোংরা রাজনীতির বলি হলাম আমরা। তবে আল্লাহর দরবারে একটাই ফরিয়াদ জানাচ্ছি বারবার, এসব নোংরামির পেছনে যে মুখোশধারী মুনাফেকরা আছে তাদের মুখোশটা যেন দুনিয়াবাসীর সামনে আল্লাহ একেবারে উন্মোচন করে দেন।’