জুমার নামাজের বয়ানে সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলেন ইমাম। এতে মাওলানা রহমত উল্লাহ নামের এক ইমামকে চাকরিচ্যুত করা বলে জানা গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া এবং কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করায় চার পরিবারকে সমাজচ্যূত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমন ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় ছেঙ্গারচর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে।
স্থানীয়রা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ওই ওয়ার্ডের জোড়খালি গ্রামের বাসিন্দা সাইফুদ্দিন গত ২২ জুন ইমামের চাকরিচ্যূতের প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। সমাজচ্যূত অন্য তিন পরিবারের সদস্যরা ওই পোস্টে কমেন্ট করেন। এ ঘটনা মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মানহানি হয়েছে দাবি করে ওই চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে মসজিদ কমিটি। ক্ষমা চাইলে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয় কমিটির পক্ষ থেকে।
মসজিদ কমিটির পর ফেসবুকে শিপন আহম্মেদ নামের একজন সাইফুদ্দিনের ছবি দিয়ে সমাজচ্যূতের ঘোষণা জানান। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সমাজ থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে’। এর পর থেকে সমাজের লোকজন এই চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা ও চলাফেরা বন্ধ করে দেয়।
সাইফুদ্দিন বলেন, ‘পৌর কাউন্সিলর সবুজ বেপারী গেলো নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।
তার যোগসাজশে আমাদের বিরুদ্ধে মসজিদ কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ফেসবুকে কারো নাম নিয়ে পোস্ট করিনি। পোস্টে ছিল ‘মসজিদের ইমাম পাল্টানো যায়। কিন্তু ঘুষখোর আর সুদখোর পাল্টানো যায় না।’
সাইফুদ্দিনের পোস্টে মসজিদ কমিটির সম্মানহানি হয়েছে বলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন মসজিদ কমিটির সদস্য রুহুল আমিন মিয়াজীর।
তিনি বলেন, ‘ওই বৈঠকে গ্রামের ৮০ থেকে ১০০ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিল। তখন চার পরিবারকে সমাজ থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর সবুজ বেপারী ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয় স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এরইমধ্যে দুই পরিবার ক্ষমা চেয়েছে। পরিবারগুলো ক্ষমা চাইলে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আসবে গ্রামবাসী।
চাঁদপুর সনাকের সদস্য ও সাবেক সভাপতি মোশারেফ হোসেন মিরন বলেন, কোনো ব্যক্তিকে তার মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা সমাজ বা রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি। এটাকে যত দ্রুত সমাধান করা যায়, ততই মঙ্গল। তবে সমাজচ্যূতের এই বিষয়টাকে প্রশাসন শক্তভাবে মোকাবেলা করা উচিত।
মতলব উত্তর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ইমামকে বিদায় দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবে পরবর্তী ঘটনা জানা নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।