প্রায় প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশে। এবার বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে এসেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ইতোমধ্যে সাগর পাড়ের জেলাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বাঁচার দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দমকা হওয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যেতেন এবং উদ্বিগ্ন হয়ে চলাফেরা করতেন। যখন বৃষ্টি হতো তখন তিনি খুশি হতেন। হযরত আয়েশা রা. বলেন, যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝড়ো বাতাস বইত- তখন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠত। এই অবস্থা দেখে তিনি এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকতেন এবং এ দোয়া পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسأَلك خَيرهَا وَخير مَا فِيهَا وَخير مَا أرْسلت بِهِ وَأَعُوذ بك من شَرها وَشر مَا فِيهَا وَشر مَا أرْسلت بِهِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা-ফিহা ওয়া খাইরা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা-ফিহা ওয়া শাররি মা-উরসিলাত বিহি।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এ বৃষ্টির কল্যাণগুলো কামনা করছি, এই বৃষ্টিতে যেসব কল্যাণ রয়েছে সেগুলো কামনা করছি এবং এই বৃষ্টির মাধ্যমে প্রেরিত কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর আর এ বৃষ্টি ও বৃষ্টির মাধ্যমে প্রেরিত সব রকম অকল্যাণ ও বিপদাপদ থেকে পরিত্রাণ চাই।
এরপর যখন বৃষ্টি হতো- তখন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্ত হতেন। হযরত আয়েশা রা. আরও বলেন, আমি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি যে লোকজন মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়ে থাকে, আর আপনি তা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন?’
এর জবাবে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি এ ভেবে শঙ্কিত হই যে বৃষ্টি আমার উম্মতের ওপর আজাব হিসেবে পতিত হয় কি না। কেননা আগের উম্মতদের ওপর এ পদ্ধতিতে (বৃষ্টি বর্ষণের আকারে) আজাব পতিত হয়েছিল। (বুখারি: ৩২০৬)
ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে গিয়ে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা।
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন-
‘এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা করবো? আমার উটনিটি ছেড়ে দিয়ে নাকি বেঁধে রেখে?’
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
প্রথমে তোমার উটনিটি বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর ভরসা করো। (তিরমিজি: ২৫১৭)
বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ করা
ইস্তিগফার পাঠে বান্দার ক্ষয়-ক্ষতি রোধ হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً*يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَاراً*وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَاراً
অতপর বলেছি- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)
ইস্তিগফারের বাক্য
أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ।
অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি।
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।
অর্থ : আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তার কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।