
আমরা গভীর বেদনাভরা হৃদয়ে লক্ষ্য করছি—‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নামে সাম্প্রতিক যে দলিল প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক জাগরণের ইতিহাসকে উপস্থাপন করতে গিয়ে একটি অপূরণীয় অন্যায় সংঘটিত হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রে ইতিহাসের এক দুর্জয় অধ্যায়—মাদরাসার ছাত্রদের রক্তঝরা আত্মত্যাগ—চোখ বন্ধ করে উপেক্ষা করা হয়েছে। এই অবহেলা কেবল হতাশাজনক নয়, বরং আমাদের হৃদয়ে ক্ষোভ ও যন্ত্রণার দাবানল জ্বালিয়ে দিয়েছে।
জুলাই আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে মাদরাসার ছাত্রদের রক্ত ছিল আগুনের মতো—যা পুড়িয়ে দিয়েছিল অন্যায়ের প্রাচীর। শাপলার বুকচেরা আর্তনাদ, হেফাজতের শহীদ ছাত্রদের নিথর দেহ, বুলেটবিদ্ধ সেই মুখগুলো—সবই ছিল এই আন্দোলনের প্রকৃত ভিত্তি। অথচ, ঘোষণা যখন হলো ইতিহাসের, তখন সেই শহীদদের নাম এল না একবারও! যারা সবচেয়ে আগে গুলি খেয়েছে, যারা বুক চিতিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তারা যেন আজ ইতিহাসের পাতায় অদৃশ্য!
আমরা জিজ্ঞেস করি—এই প্রহসন কেন?
কে এমন সাহস করলো, যে শাপলার রক্তের ধারাকে ভুলে গেল?
যে শাপলা ট্র্যাজেডির তাজা রক্ত না ঝরলে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাটি প্রস্তুত হত না—সেই শাপলার নামও নেই?
এটা কি নিছক ভুল, না সুপরিকল্পিত মুছে ফেলা?
আমরা বলি—এটি নিছক বিস্মৃতি নয়, এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় বিবেকের ভাঙন! এটি ইতিহাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা!
এই ধরণের পক্ষপাতদুষ্ট দলিল কেবল ইতিহাস বিকৃতি নয়, বরং জাতির মধ্যে বিভাজন তৈরি করে। এটি শহীদের রক্তকে অপমান করা, সত্যের কণ্ঠকে চেপে ধরা। আমরা মনে করি—একটি জাতির ইতিহাস তার শহীদদের রক্তের ধারায় লেখা হয়, কোনো দপ্তরের মনগড়া কলমে নয়।
তাই, বৃহত্তর উত্তরা উলামা পরিষদ ঘোষণাপত্রের এই একচোখা দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং জোর দাবি করে—
ইতিহাসে মাদরাসার ছাত্রদের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দিতে হবে,
শাপলার শহীদদের নাম ইতিহাসের পাতায় সম্মানের সাথে ফিরিয়ে আনতে হবে,
এবং ভবিষ্যতের সব জাতীয় দলিলে সকল অংশের ভূমিকা নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরতে হবে।
আমরা বলতে চাই—আমাদের শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ইতিহাস বিকৃতি রোধে এই প্রতিবাদ কেবল শব্দ নয়, এটি আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।
বিবৃতিদাতা:
মুফতি কামালুদ্দীন
সভাপতি,বৃহত্তর উত্তরা উলামা পরিষদ
মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আমিন
সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর উত্তরা উলামা পরিষদ