মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আমিন:
আজ যারা ছাত্র অবস্থায় ইসলামী রাজনীতিকে হারাম বলে ফতোয়া দেন, আর লেখাপড়া শেষ করে রাজনীতিতে আসতে বলেন—তাদের প্রতি প্রশ্ন হলো:
আপনি তো এখন ছাত্র নন, তাহলে আপনি কেন ইসলামী রাজনীতির মাধ্যমে দিন বিজয়ের সংগ্রামে যুক্ত হচ্ছেন না?
রাজনীতি কোনো বিলাসিতা নয়, বরং তা হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় প্রতিরোধের সংগ্রাম। কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী আল্লাহর শরীয়াহ কায়েম করা এবং তাগুতের বিরোধিতা করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্ব পালনের জন্য ছাত্রজীবনেই প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
ছাত্রজীবন কেন রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
ডাক্তার হতে হলে ছাত্রজীবনে মেডিকেল পড়তে হয়।
ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে ছাত্রজীবনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হয়।
নেতা হতে চাইলে ছাত্রজীবনেই নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
অতএব, ছাত্রজীবন ইসলামী রাজনীতির জন্য হারাম নয়, বরং সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। রাসূল ﷺ এর তরুণ সাহাবিরাই এর প্রমাণ। হযরত আলী (রা.), মুসআব ইবনে উমাইর (রা.), উসামা ইবনে যায়েদ (রা.)—তাঁরা ছিলেন তরুণ, কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের প্রধান সেনানায়ক।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ: গণতান্ত্রিক রাজনীতি বনাম ইসলামী রাজনীতি
১. গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই রাজনীতির শুরু হয় কলেজ-ভার্সিটি থেকে।
ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই বড় বড় গণতান্ত্রিক নেতা তৈরি হয়েছেন।
তাদের রাজনীতি হচ্ছে ভোট, ক্ষমতা ও দলীয় স্বার্থকেন্দ্রিক।
২. ইসলামী ছাত্র রাজনীতি
ইসলামী রাজনীতি হলো শরীয়াহভিত্তিক সমাজ ও খেলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
এ ক্ষেত্রেও ছাত্রজীবনই হলো নেতৃত্ব তৈরির প্রথম ধাপ।
পার্থক্য শুধু উদ্দেশ্যে—গণতান্ত্রিক রাজনীতি যেখানে মানবকেন্দ্রিক, ইসলামী রাজনীতি সেখানে আল্লাহকেন্দ্রিক।
তাহলে প্রশ্ন হলো—যারা কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নেতা হতে পারে, তারা যদি বৈধ হয়; তবে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতির প্রশিক্ষণ নেওয়া কেন হারাম হবে?
মোদ্দা কথা হল
ছাত্রজীবন হলো চরিত্র ও নেতৃত্ব গড়ার সময়। এখানে যদি ইসলামী রাজনীতির প্রশিক্ষণ না হয়, তবে ভবিষ্যতের ইসলামী নেতৃত্ব কখনোই সুসংগঠিত হবে না। ইসলামী আন্দোলনের জন্য তরুণ ছাত্রদেরই হতে হবে সেই সৈনিক ও ভবিষ্যৎ নেতা, যারা দ্বীনের পতাকা উঁচু করে আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবে।