আজ (৫ মে) রোববার, সকাল ১০ টায়, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, কাকরাইলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর উদ্যোগে বর্তমান ‘জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম ও নতুন পাঠ্য পুস্তকের বাস্তবতা ও ভবিষ্যত' শীর্ষক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেফাজতের নায়েবে আমীর ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ সময় আমীরে হেফাজতের লিখিত বক্তব্য যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘জাতীয় পাঠ্যবই নিয়ে একের পর এক বিতর্ক হচ্ছে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কোনো জাতিকে পরাজিত করতে হলে সেই জাতির শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করাই যথেষ্ট।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে আপনাদের সন্তানদের গড়ে তুলতে হলে এই বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাখ্যানের বিকল্প নেই।’ দেশের সচেতন অভিভাবকদের প্রতি আমাদের আহ্বান, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও কারিকুলামের ব্যাপারে আপনারা আরো সরব হোন। ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে আপনাদের সন্তানদের গড়ে তুলতে হলে এই বর্তমান বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাখ্যানের বিকল্প নেই। ইসলামবিরোধী হিন্দুত্ববাদী পাঠ্যবই প্রত্যাখ্যান করুন। স্কুলে আপনার সন্তানদের কী শেখানো হচ্ছে তা জনসম্মুখে তুলে ধরুন। আমাদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তক আজ হিন্দুত্ববাদের কবলে পড়েছে। অঙ্কুরেই মুসলমানের ছেলেমেয়েদের ঈমানি চেতনা ধ্বংস করার আয়োজন করা হচ্ছে। সেক্যুলারিজমের নাম দিয়ে ইসলাম নির্মূল করার এই চক্রান্ত আমরা সফল হতে দেবো না ইনশাআল্লাহ।
সেমিনারে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান ৭টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ‘ইসলামী শিক্ষা বিষয়’ প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শাখায় আবশ্যিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়ন তথা বোর্ড পরীক্ষায় ‘ইসলামী শিক্ষা বিষয়’ পুনঃবহাল করতে হবে। বিতর্কিত ও প্রত্যাখ্যাত কোরআনবিরোধী বিবর্তনবাদ ও ট্রান্সজেন্ডারবাদসহ ইসলামবিরোধী সব পাঠ্যরচনা সিলেবাস থেকে অপসারণ করতে হবে। আরব দেশগুলোর শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য আরবি ভাষার পাঠদান সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক করতে হবে। উল্লেখ্য, ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ উদ্দেশ্যে আরবি ভাষা শিখে এগিয়ে রয়েছেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের সহযোগীদের চিহ্নিতকরণপূর্বক অপসারণ করে দেশপ্রেমিক ও ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে। ভবিষ্যতে বিতর্ক এড়াতে দেশের নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শের আলোকে পাঠ্যবইয়ের পুনঃসংস্করণ করতে হবে। ২০১৩ থেকে অদ্যাবধি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের প্রতি আমাদের প্রস্তাব ও যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়নের আহবান জানাই। একইসাথে দেশের জনগণকে ইসলামবিরোধী ও জাতীয় মূল্যবোধপরিপন্থী এ শিক্ষা কারিকুলামের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।
সেমিনারে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলদনা আতাউল্লাহ আমীন ও মুফতী কিফায়াতুল্লাহ আজহারীর সঞ্চালনায় প্রবন্ধের উপর আলোচনা পেশ করেন সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী, নায়েবে আমীর সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মুফতী জসিম উদ্দীন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা মোবারকুল্লাহ, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, অর্থ সম্পাদক মুফতী মুনির হুসাইন কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা জালালুদ্দীন, মুফতী হারুন বিন ইজহার, সহকারী মহাসচিব মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী বশিরুল্লাহ, ড. আসিফ মাহতাব, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, মাওলানা জাবের কাসেমী, মাওলানা এনামুল হক মুসা প্রমুখ।