JuboKantho24 Logo

‘পাঁচ বছর সাত মাস হলো পোস্ট অফিসে দুই লাখ টাকা রেখেছি, এখন পুরো টাকাই গায়েব’

সঞ্চয়পত্রের দুই লাখ টাকার হদিস না পেয়ে পারুল বেগম নামে এক নারী আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। পরে পুলিশসহ পোস্ট অফিসের লোকজন তাঁকে থামান। এমন একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই নারী তানোর পৌর শহরের গোকুল এলাকার মৃত এনামুল হাসান রনির স্ত্রী।

ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিধবা পারুল বেগম বলেন, ‘পাঁচ বছর সাত মাস হলো আমি দুই লাখ টাকা রেখেছি। আমার স্বামী ব্লাড ক্যানসারে মারা গেছে। আমার এতিম বাচ্চার টাকা এগুলো। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ে ছয় মাসের গর্ভবতী। আমি নভেম্বর মাসে টাকা পাব, বলে ডিসেম্বর মাসে জামাই-বেটিক (মেয়ে) এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা আছে। ছয় মাস থেকে ঘুরছি। তারা আজ আসো, কাল আসো বলে ঘুরাচ্ছে। আমি কী করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন এসে গলায় ফাঁস দিয়েছি। পুলিশ এসে বুঝিয়েছিল। তখন তারা (পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ) বলছে ১৫ দিন পরে টাকা দিয়ে দেবে, জবান দিয়েছিল। কতক্ষণ আমাকে আটকায়ে রাখবে। হয় জেলে বসে খাব, না হয় মরব। মৃত্যু আমাকে ঘেরাও করেছে। যে কোনো সময় মরবই।’

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছে, তানোর পৌর শহরের কুঠিপাড়ায় উপজেলা পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) মুখছেদ আলী কৌশলে গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে চলে যান। ওই পোস্টমাস্টারের প্রতারণার শিকার হন পারুল বেগম।

পাঁচ বছর আগে তানোর উপজেলা পোস্ট অফিসে দুই লাখ টাকা জমা রাখেন। অভাবের সংসারে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্বামীও। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সেই মেয়ের জামাইকে এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা। এ জন্য তিনি নিজের অ্যাকাউন্টে রাখা টাকা তুলতে তানোর পোস্ট অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। নিজের একমাত্র সঞ্চয়ের টাকা গায়েব জেনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর মধ্যে তিনি সেখানে কয়েকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন। এ সময় লোকজন তাঁকে থামিয়ে তানোর থানা-পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

পরে পোস্ট অফিসের কর্মীরা পারুল বেগমসহ আরও কয়েকজন ভুক্তভোগীকে রাজশাহীতে নিয়ে এসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলান। শুধু তিনিই (পারুল বেগম) নন, তানোর কেন্দ্রীয় পোস্ট অফিসে আরও প্রায় ২৫০ গ্রাহকের জমাকৃত টাকা এভাবেই গায়েব করেছেন তৎকালীন পোস্টমাস্টার মুখছেদ আলী।

তানোর উপজেলার বর্তমান পোস্টমাস্টার আব্দুল মালেক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগের পোস্টমাস্টার মুখছেদ আলীর সময়ে এ অফিসে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এই পোস্ট অফিসের গ্রাহক প্রায় ৩০০ জন। তাঁদের মধ্যে কতজনের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, সেটি তদন্তের বিষয়। তবে পোস্ট অফিসে পারুল নামের এক নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকেসহ কয়েকজন ভুক্তভোগীকে রাজশাহী বিভাগীয় পোস্ট অফিসে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কথা বলেছেন।’

তানোর থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ভুক্তভোগী পারুল বেগম নামে এক নারী উপজেলা পোস্ট অফিসে এসে টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা করার কথা জানান। তখন থানায় খবর দিলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে তাঁকে উপজেলা পোস্ট অফিসের কর্মীরা রাজশাহী ডাক বিভাগ অফিসে নিয়ে যান। এই ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেননি।’

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত হবে, মামলা হবে। তবে যেসব ভুক্তভোগী আমাদের কাছে আসছেন, প্রত্যেককে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি যে আপনারা টাকা ফেরত পাবেন। তবে সময় লাগবে।’

এ বিষয়ে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এই ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেননি। এরপরও আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’

Jubokantho24 Ad
এ জাতীয় আরো সংবাদ
এ জাতীয় আরো সংবাদ