গড় আয়ুতে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন নারীরা। তবে গবেষণা বলছে, নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি বাঁচলেও তারা অসুস্থ থাকেন অনেক বেশি। জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা যেসব রোগে ভোগেন সেগুলো প্রাণঘাতী না হলেও অসুস্থতা ও শারীরিক অক্ষমতা তৈরি করে। এসব রোগের অন্যতম হলো পেশির সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মাথাব্যথা।
অন্যদিকে পুরুষেরা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো হৃদরোগ, শ্বাসযন্ত্র, যকৃতের রোগ এবং কোভিড-১৯। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারায় পুরুষেরা।
স্বাস্থ্যগত দিক থেকে নারী-পুরুষের ব্যবধান বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা নারীর স্বাস্থ্য উন্নয়নে জরুরি ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী রোগব্যাধির ২০ শীর্ষস্থানীয় কারণ পরীক্ষার ভিত্তিতে এ গবেষণা চালানো হয়েছে। এতে নারী-পুরুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান দেখা গেছে। গত তিন দশকে এ ব্যবধান পূরণে সীমিত অগ্রগতি হয়েছে।
নারী চিকিৎসকের সেবা নেওয়া রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি : গবেষণা
নারী-পুরুষের মধ্যকার স্বাস্থ্যগত ভিন্নতা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায়। এতে করে নারীরা ক্রমেই জীবনভর অসুস্থতা ও শারীরিক অক্ষমতায় ভোগেন। এমন সব পরিস্থিতির মোকাবিলা করে তারা পুরুষের চেয়ে বেশি সময় বাঁচেন।
স্বাস্থের এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)-এর গবেষক ড. লুইসা সোরিও ফ্লর। তিনি বলেন, এতে স্পষ্ট দেখা গেছে যে গত ৩০ বছরে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ইস্যুতে বৈশ্বিকভাবে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা অসম। নারীরা বেশি বছর বাঁচলেও তাদের অসুস্থতার হার অপেক্ষাকৃত বেশি।
তিনি আরও বলেন, নারীদের বিশেষ করে বয়স্ক অবস্থায় শারীরিক ও মানসিক কার্যক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। এ দিকে নজর দেওয়া এখন জরুরি। একইভাবে পুরুষরা অপেক্ষাকৃত উচ্চঝুঁকি ও প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হন।
গবেষণায় ২০২১ সালের গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে এতে স্ত্রীরোগ ও প্রোস্টেট ক্যানসারের মতো স্বাস্থ্য অবস্থার তথ্যগুলো নেওয়া হয়নি।
গবেষণায় ২০২১ সালের অসুস্থতা ও মৃত্যুর শীর্ষ ২০ কারণের মধ্যে ১৩টি পুরুষের মধ্যেই দেখা গেছে। পুরুষের মাঝে শনাক্ত হওয়া রোগগুলো হলো কোভিড-১৯, সড়ক দুর্ঘটনা, হৃদরোগ, শ্বাসযন্ত্র এবং যকৃতের রোগ। এসব রোগে নারীদের চেয়ে পুরুষরা আক্রান্ত হয়েছেন।
অন্যদিকে নারীদের মাঝে শনাক্ত হওয়া রোগগুলো হলো মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথা, বিষণ্নতা, মাথাব্যথা, উদ্বেগ, হাড় ও পেশির সমস্যা, স্মৃতিভ্রম, এইচআইভি। নারীরা এসব রোগে ভুগলেও তাদের এসবের কারণে অকাল মৃত্যু হয় না তাদের।