আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মের শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘদিনের জনদাবি উপেক্ষা করে একদিকে অযৌক্তিকভাবে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে, অন্যদিকে কোটার ভিত্তিতে তথাকথিত “তৃতীয় লিঙ্গ (ট্রান্সজেন্ডার)” ব্যক্তিদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা এই অবিবেচনাপ্রসূত ও অসংগত সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই।
সাম্প্রতিক ওয়েভ ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তব চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ—
১০.২৮% ছেলে ও ৮.৭১% মেয়ে বাংলা বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না।
১৩.৬২% শিশু এক অঙ্কের সংখ্যাও চিনতে অক্ষম।
১৬.৭৮% ছেলে ও ১৫.২২% মেয়ে ইংরেজি বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে জানে না।
এই পরিস্থিতি স্পষ্ট করে যে, প্রাথমিক শিক্ষায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মৌলিক শিক্ষা (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) নিশ্চিত করা। অথচ সরকার এসব মৌলিক ঘাটতি দূর করার পরিবর্তে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ ও বিতর্কিত কোটাভিত্তিক নিয়োগকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা জাতির শিক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য এক গভীর হুমকি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম মিলন দেশের প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মের শিক্ষক নিয়োগে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিগত একবছরে সরকার এই বিষয়ে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি—
মৌলিক শিক্ষা যখন ভয়াবহ সংকটে, তখন দেশব্যাপী ৬৫ হাজারেরও বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী।
বাংলাদেশের ৯২% মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাস্তবতা উপেক্ষা করে ইসলাম শিক্ষকের পরিবর্তে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ একটি সাংস্কৃতিক বৈপরীত্যের নামান্তর।
‘তৃতীয় লিঙ্গ’ কোটার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থায় বিতর্কিত এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যার সংজ্ঞা এখনো অস্পষ্ট এবং যা শিক্ষাঙ্গনে নতুন বিভাজন তৈরি করবে।
বৃহত্তর উত্তরা উলামা পরিষদ সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মের শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।