মূল: মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান, তর্জমা: মওলবি আশরাফ
ইসরাইলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে দায়ান (১৯১৫–১৯৮১) তার আত্মজীবনী The Story of My Life-এ এক চমকপ্রদ সত্য লিখে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন—The Arabs, disunited and at odds with one another over every issue, big and small, present no threat.
আরবরা, যারা ছোট-বড় সবধরনের ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে, তারা কখনোই ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে না।
এই কথাগুলো নিছক কূটনৈতিক পর্যবেক্ষণ ছিল না; বরং ভবিষ্যতের বাস্তবতার একটি রূঢ় পূর্বাভাস ছিল।
১৯৮৩ সালের শেষার্ধে দেখা গেল, সেই একই বিভেদের বিষ এবার ফিলিস্তিনিদের শরীরে ঢুকে গেছে। ‘আল-ফাতহ’ নামক প্রধান ফিলিস্তিনি সংগঠনেই শুরু হয়ে গেল বিভেদ। লেবাননের ময়দানে ব্যর্থতার পর ফিলিস্তিনিদের একটি বড় অংশ ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বের ওপর থেকে আস্থা সরিয়ে নেয়। তারা ‘আবু মূসা’-র নেতৃত্বে এক নতুন ধারা গড়ে তোলে, যার উদ্দেশ্য—ইয়াসির আরাফাতকে নেতৃত্বচ্যুত করা।
অন্যদিকে, আরাফাতও নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি নন। ফলে গড়ে উঠল দুটি পরস্পরবিরোধী গোষ্ঠী, এবং সেই বিভাজন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় ইসরাইলের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইৎজাক শামিরের একটি বক্তব্য ছাপা হয়।
তিনি বলেন: I must say that it is good for Israel that there are domestic quarrels. breakups and divisions within the organization of the PLO.
আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, পিএলও-র ভেতরে এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিভাজন ও ভাঙন আমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক।
আরও স্পষ্ট করে পত্রিকাটি তুলে ধরে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, লেবাননের উত্তর ও পূর্ব অংশে ইয়াসির আরাফাতের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ বাড়ছে, তার ফলে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি সেনার ওপর ফিলিস্তিনি হামলার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
এর প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের এক কর্মকর্তা সরল ভাষায় মন্তব্য করেন: They are busy themselves, and that is good for us.
তারা এখন নিজেদের মধ্যেই ব্যস্ত, আর সেটাই আমাদের জন্য ভালো। (গার্ডিয়ান, ৩ জুলাই, ১৯৮৩)
এই কথাগুলো নিছক শত্রুর উক্তি নয়, বরং আমাদের জন্য এক সতর্কবার্তা। নিজেদের মধ্যে লড়াই শুরু করে যে জাতি, সে নিজের শত্রুকে আর দোষারোপ করতে পারে না। বরং সে নিজেই হয়ে ওঠে নিজের শত্রু। এ যেন সেই ধ্বংসযজ্ঞ, যা শত্রু নিজ হাতে করতে চেয়েছিল—এখন তা আমরা নিজের হাতেই করে দিচ্ছি।
বই: রাজে হায়াত, পৃষ্ঠা : ২৩৮