তাবলিগ জামাতের কাজের সূচনা হয়েছিল গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ১৯২৪ সালে। ভারতের দিল্লির নিকটবর্তী মেওয়াত নামক স্থানে এর সূচনা করেন মাওলানা ইলিয়াস রহিমাহুল্লাহ। সাধারণ মুসলমানদের যারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং আলেমদের কাছে গিয়ে ধর্মীয় বিষয়ে জানার সুযোগ পান না, তাদের কাছে সহজেই ধর্মীয় মৌলিক বিষয়ের ধারণা পৌঁছিয়ে দিতে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন তিনি।
তাবলিগের সূচনা লগ্নে তিনি মেওয়াতে একটি ইসলাহি ইজতেমার আয়োজন করেন। সেখান থেকে তিনি তাদের জামাত নিয়ে আশপাশের গ্রামে বের হওয়ার আহ্বান করেন। এর এক মাস পর মেওয়াতের পার্শ্ববর্তী গ্রামে প্রথম জামাত বের হয়। এরপর ধীরে ধীরে উপমহাদেশ, উপমহাদেশ থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে দাওয়াতে তাবলিগের কাজ।
বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রথম আমির ছিলেন মাওলানা আবদুল আজিজ। মাওলানা আবদুল আজিজ রহিমাহুল্লাহকে তাবলিগের কাজের দায়িত্ব দেন বাংলাদেশের মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহিমাহুল্লাহ। তিন ১৯৪৪ সালে সর্বপ্রথম ইলিয়াস রহিমাহুল্লাহর সঙ্গে দেখা করে তাবলিগি কাজ এগিয়ে নেওয়ার অনুমতি লাভ করেন। কিন্তু অন্যান্য দ্বিনি কাজের প্রয়োজনে তিনি এই দায়িত্ব অর্পণ করেন বাগেরহাটের মাওলানা আবদুল আজিজ রহিমাহুল্লাহর ওপর।
দায়িত্ব লাভের পর মাওলানা আবদুল আজিজ রহিমাহুল্লাহ প্রথমে কলকাতা ও পরে দিল্লিতে তাবলিগি কাজে যুক্ত হয়ে এই কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি তাবলিগের কাজ আরম্ভ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের আমির এবং আলমি শুরার (বৈশ্বিক নির্বাহী কমিটি) সদস্য ছিলেন। তার মাধ্যমেই বাংলাদেশে তাবলিগের কাজ ছড়িয়ে পড়ে।
মাওলানা আবদুল আজিজ রহিমাহুল্লাহর কাজের সূত্রে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রথম কেন্দ্রীয় মারকাজ স্থাপিত হয় খুলনা জেলার উদয়পুর মাদরাসা-মসজিদে। দ্বিতীয় মারকাজ ছিল খুলনা জেলার তেরখাদা থানার বামনডাঙ্গায়।
তৃতীয় মারকাজ ছিল খুলনা শহরের হেলাতলার তালাবওয়ালি মসজিদে। এরপর কেন্দ্রীয় মারকাজ ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। ঢাকার লালবাগ শাহি মসজিদে স্থাপিত হয় তাবলিগ জামাতের চতুর্থ মারকাজ এবং পঞ্চম মারকাজ ছিল লালবাগ কেল্লার উত্তর-পশ্চিমে খান মুহাম্মদ মসজিদে। ষষ্ঠ ও শেষ মারকাজ স্থাপিত হয় রমনা পার্কের পাশে অবস্থিত মালওয়ালি মসজিদে।
সম্প্রসারণের পর মালওয়ালি মসজিদ কাকরাইল মারকাজ মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। এটাই বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রধান ও কেন্দ্রীয় মারকাজ। সারা দেশের তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম এখান থেকে পরিচালিত হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক বিভাগীয় ও জেলা শহরে তাবলিগ জামাতের আঞ্চলিক মারকাজ রয়েছে।