বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী বৈঠকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা।।
চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে জাতি আতঙ্কগ্রস্ত, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমূল সংস্কার প্রয়োজন।।
ঢাকা, ১২ জুলাই ২০২৫:
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নিয়মিত মাসিক বৈঠকে রাজধানীর মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী মোঃ সোহাগকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সারাদেশে ভয়াবহভাবে বিস্তৃত চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দলটি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে দলের আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, ব্যবসায়ী সোহাগকে শত শত মানুষের সামনে পাথর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা—এটি শুধু একটি ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং বিচারহীনতা ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার জঘন্য পরিণতি। এই ধরনের ঘটনা এ জাতির জন্য চরম লজ্জার।
তিনি আরও বলেন, চাঁদাবাজদের দখলে এখন দেশের প্রতিটি বাজার, দোকানপাট, পরিবহন ও নির্মাণ খাত। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের দীর্ঘদিনের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি সংস্কৃতি এখন ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। শুধু ব্যবসায়ী নয়, ইমাম-খতিব ও আলেম সমাজ পর্যন্ত এই দস্যুবৃত্তির শিকার হচ্ছেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়।
নির্বাচন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা চাই, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এমন একটি পদ্ধতিতে হোক যেখানে নিম্নকক্ষে আংশিক এবং উচ্চকক্ষে পূর্ণ পেয়ার পদ্ধতি কার্যকর হয়। এতে করে রাজনীতির মাঠ থেকে দুর্বৃত্ত চক্রের উৎপাত কমবে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় সুবিচার প্রতিষ্ঠা পাবে ইনশাআল্লাহ।
বৈঠকে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের জান-মাল রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। চাঁদাবাজ চক্র ও সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত অংশের মদদে এসব অপরাধী গোষ্ঠী দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদনেরও তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR) স্থাপন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ। ইসলামি জীবনব্যবস্থা, পারিবারিক কাঠামো ও জাতীয় স্বকীয়তার বিরুদ্ধে এটি একটি গ্লোবাল ইসলামবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র।
তারা বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি একসময় সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়ে জাতির সহানুভূতির কেন্দ্রস্থলে ছিলেন, এখন নিজেই সেই গ্লোবাল এজেন্ডার বাহক হয়ে উঠেছেন। তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ইসলামি শরিয়াহ, পারিবারিক মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছেন।
নেতারা আরও বলেন, এই তথাকথিত মানবাধিকার অফিস ইতিপূর্বে বহু মুসলিম দেশে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক শালীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে। এটি এক প্রকার সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কেন্দ্র, যার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা ও যৌন বিচ্যুতি চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ একটি ঈমানি চেতনায় প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৪৭, ১৯৭১, ২০১৩ ও ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে—এই জাতি ইসলাম, স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কখনোই আপস করে না। কিন্তু আজ সেই স্বকীয়তার উপর একটি নতুন সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।
তারা জোর দিয়ে বলেন, জাতীয় স্বার্থ, ধর্মীয় স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো আপস নয়। এই ষড়যন্ত্র আমরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিরোধ করবো ইনশাআল্লাহ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন—
সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমীর- মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, মুফতি সাঈদ নূর, মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা হেলালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা কুরবান আলী কাসেমী। যুগ্ম মহাসচিব- মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, মুফতি শরাফত হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক -মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা মুহাম্মাদ ফয়সাল, মাওলানা আবু সাঈদ নোমান, মুফতি উজাইর আমীন, মাওলানা নিয়ামতুল্লাহ, মাওলানা মুহসিনুল হাসান।
প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূইয়া, অফিস সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমীন খান, আইন বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শরীফ হোসাইন, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা হাসান জুনাইদ।
নির্বাহী সদস্য-মাওলানা আব্দুল মুমিন, মাওলানা মামুনুর রশীদ, মাওলানা মুহসিন উদ্দীন বেলালী, মাওলানা সাব্বির আহমদ উসমানী, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা জসিম উদ্দীন, মাওলানা লিয়াকত হোসাইন, হাফেজ শহীদুল ইসলাম, মাওলানা আনোয়ার মাহমুদ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রাজী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী। ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুর্শিদুল আলম সিদ্দিক এবং দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাকীবুল ইসলাম প্রমূখ ।