জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশি নেতাদের উপর আমেরিকায় প্রবাসী আওয়ামী লীগের উগ্রঅনুসারীদের হামলা — কোথায় গেল আয়োজক ও নিরাপত্তা প্রটোকল?
জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া বাংলাদেশের নেতারা — এনসিপি সদস্যসচিব জনাব আকতার, জনাব জারা, বিএনপি মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ও জামাতনেতা জনাব আবু তাহেরসহ আরও অনেকে— আমেরিকার মাটিতে প্রবাসী আওয়ামী লীগের উগ্রপন্থীদের হামলার শিকার হয়েছেন। ঘটনার সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে ডিম নিক্ষেপ, কটূক্তি ও আক্রমণাত্মক আচরণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এমন অশোভন আচরণ দেখে প্রবাসী বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে, এবং ঘরে দেশে, ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি কী ছিল — সংক্ষেপে
জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট একটি সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সফরসঙ্গী হন বাংলাদেশের জাতীয় ৩দলের শীর্ষ নেতারা।নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টে অবতরণ করে নির্দিষ্ট হোটেলে যাওয়ার পথে বাইরে কিছু সংগঠিত ব্যক্তিরা আমাদের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করে — উচ্চস্বরে অপমানসূচক স্লোগান, কটূক্তি এবং ডিম নিক্ষেপ পর্যন্ত ঘটেছে। ঘটনার সময় উপস্থিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৎপরতার স্বাক্ষ্য দেননি বলে অভিযোগ উঠে — ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নেতারা মানসিক ও সামাজিকভাবে তীব্র অনুশোচনায় পড়েন।
আমেরিকা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে যে দাবি করে, আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অতিথির নিরাপত্তা নিশ্চিতে তার সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিদেশি প্রতিনিধির সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষায় আয়োজক দেশের দায়িত্ব অত্যন্ত স্পষ্ট। কিন্তু যে ভিডিও/সাক্ষ্যপ্রমাণ ও সপ্রতক্ষে ঘটনা সামনে এসেছে, তা জানায়—নিরাপত্তার অভাবে এই দায়িত্ব পালিত হয়নি। ফলে প্রশ্ন ওঠে: আয়োজক কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় পুলিশ ও নিরাপত্তা প্রটোকলের মধ্যে কি অন্তঃসংঘাত ছিল? নাকি কোনও রাজনৈতিক পক্ষাভিমুখতা কাজ করেছে?
এই হামলা শুধুই একটি ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়—এটি প্রবাসী রাজনৈতিক লোকসান ও দলীয় উগ্রবাদিতার বহিঃপ্রকাশ। প্রবাসের মাটিতেও রাজনৈতিক সহিংসতা ও উস্কানির ছায়া ছড়ানো হয়েছে—যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও বিদেশে দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি সাধন করে।
একজন বৈধ প্রতিনিধির ওপর বিদেশে আক্রমণ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও নিরাপত্তা নীতির পরিপন্থী। এখানে দায়বদ্ধতা তদন্ত করা জরুরি—যোগ্য কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাত অবহেলা ধরা পড়ে কিনা, নিরাপত্তা প্রটোকল মেনে চলা হয়েছে কিনা, এবং হামলায় কারা জড়িত—এসব বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের ঘটনা যদি সঠিকভাবে তদন্ত না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মঞ্চে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা শূন্যে পড়ে থাকবে বলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধারণা তৈরি হবে।
আমাদের দাবি (সংক্ষেপ)
১। স্বচ্ছ ও তৎক্ষণাত তদন্ত: আমেরিকান কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্ত চালিয়ে দায়ীদের আইনের আওতায় আনুক।
২। পরবর্তী প্রটোকল: ভবিষ্যতে বিদেশে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ও সার্বভৌম প্রটোকল প্রণয়ন করা হোক।
৩। কূটনৈতিক জবাবদিহি: বাংলাদেশ সরকার ঘটনার ওপর স্পষ্ট কূটনৈতিক নোটিস নিক এবং প্রয়োজনীয় কনস্যুলার সাপোর্ট প্রদানে তৎপর হোক।
৪। প্রবাসী সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো—বিশেষ করে প্রবাসী শাখাগুলো—সম্মিলিতভাবে সহিংসতা, উস্কানি ও অপশাসন থেকে বিরত থাকুক; যে কেউ শাস্তিযোগ্য কার্যকলাপে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে একজন জাতীয় নেতার উপর প্রদর্শিত ঘৃণাস্পদ আচরণ কেবল যে ব্যক্তিগত অপমান নয়, তা দেশের সম্মান ও কূটনৈতিক মর্যাদার ওপরও বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলে। প্রবাসে রাজনৈতিক ছড়াছড়ি ও উগ্রতা যদি রোধ না করা হয়, তাহলে বিদেশি মাটিতেও আমাদের চলাফেরা ও বক্তব্য আঘাতপ্রাপ্ত হবে। আমেরিকার কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধি ও কূটনীতিকদের উচিত—এই ঘটনার বিশ্লেষণ করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, এবং ভবিষ্যতে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে শক্ত প্রটোকল গঠন করা।
লেখক:
সম্পাদক:যুবকণ্ঠ টুয়েন্টিফোর ডটকম
চেয়ারম্যান, প্রাইভেট মাদরাসা অ্যাসোসিয়েশন
সেক্রেটারি,বৃহত্তর উত্তরা উলামা পরিষদ