
জুলাই বিপ্লবের প্রথমসারির নেতা শরীফ ওসমান হাদির শাহাদাতে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কের ইসলামপন্থী শীর্ষ দৈনিক ইয়েনি সাফাক।
এতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লবের অন্যতম প্রধান নেতা শরিফ ওসমান হাদির শাহাদাতকে কেন্দ্র করে ঢাকায় লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে বিশাল ভারত-বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট গণ-অসন্তোষ থেকে ভারত-পন্থী হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুলাই বিপ্লবের এই প্রভাবশালী নেতার মৃত্যুর খবর আসার পর ঢাকার রাজপথে লাখ লাখ বিক্ষোভকারী সমবেত হন। তিনি মূলত তাঁর কট্টর ভারত-বিরোধী অবস্থানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। উল্লেখ্য, এই জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমেই ১৬ বছরের স্বৈরাচারী হাসিনা শাসনের পতন ঘটে।
শুক্রবার ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় এক অজ্ঞাতপরিচয় ভারত-পন্থী ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীর গুলিতে মাথায় আঘাত পান তরুণ এই রাজনীতিবিদ। কিছু সূত্রের তথ্যমতে, হামলাকারী বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার চেষ্টা নতুন কিছু নয়। এর আগেও ভারত এবং শেখ হাসিনার ভারতপন্থী পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার কারণে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করে। এ ছাড়া ভারত-বিরোধী অবস্থানের কারণে হাসিনার শাসনামলে বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে গুম করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (সাবেক) আবদুল্লাহিল আমান আজমি এবং লেফটেনেন্ট কর্নেল (সাবেক) হাসিনুর রহমান যথাক্রমে আট ও দুই বছর আয়নাঘরে বন্দি থেকে অকল্পনীয় নির্যাতনের শিকার হন।
হাদির শাহাদাতের পর ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ আরও প্রকাশ্যে এসেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পর পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে:
গত রোববার ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশ সরকার। আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে নস্যাৎ করতে ভারতের মাটি ব্যবহার করে পলাতক হাসিনা তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এরপর সোমবার ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি ও জুলাই বিপ্লবের অন্যতম নেতা আবু সাদিক কায়েম দাবি করেন, হাদির ওপর হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ হলে স্বরাষ্ট্র, আইন ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।
এই ঘটনায় জুলাই বিপ্লবের আরেক নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে লিখেন, ‘‘ভারত: সন্ত্রাসী, ভোট চোর, মাফিয়া এবং খুনিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।’’ তিনি ভারতের সেভেন সিস্টার্স (অরুণাচল, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা) বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারিও দেন।
ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বিপুল সংখ্যক জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
উত্তেজিত জনতা দৈনিক প্রথম আলো এবং দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। তাদের অভিযোগ, এই পত্রিকা দুটি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে প্রো-ইন্ডিয়া ন্যারেটিভ তৈরি করে হাসিনার স্বৈরতন্ত্রকে বৈধতা দিয়ে এসেছে।
বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। তারা এই স্থানটিকে ‘‘বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের মাজার’’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তন করে শহীদ নেতার সম্মানে ‘শহীদ ওসমান হাদি হল’ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শাহবাগ চত্বরকে ‘শহীদ হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হয়েছে।




