ছড়া কবিতার বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের কবিতা সম্মাননা ২০২৪ পেয়েছেন জনপ্রিয় লেখক মিযানুর রহমান জামীল। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটায় বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের উদ্যোগে রাজধানীর বাংলা মোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে এ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
ফোরাম সভাপতি কবি মুনীরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আমিন ইকবালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বরেণ্য লেখক ও মুহাদ্দিস মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন, মাসিক আদর্শ নারীর সম্পাদক আবুল হাসান শামসাবাদী, লেখক অনুবাদক জুবাইর আহমদ আশরাফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বার্তা টুয়েন্টফোরের সহকারী সম্পাদক ও ইসলামি লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মুফতি এনায়েতুল্লাহ, ঢাকামেইলের বার্তা সম্পাদক ও ইসলামি লেখক ফোরামের সাবেক সভাপতি জহির উদ্দিন বাবর, আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব, দৈনিক খবরের কাগজের ইসলাম বিভাগীয় প্রধান মিরাজ রহমান, লেখক সাংবাদিক মাসউদুল কাদির প্রমুখ।
জানা যায়, গত বছর তিনি এ বইয়ের জন্য ঢাকা সাহিত্য কেন্দ্র থেকে কবি সম্মাননায় ভূষিত হন এবং কাব্যকথা সাহিত্য সম্মেলনেও সম্মাননা অর্জন করেন।
ইসলামি সাহিত্যচর্চায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের আয়োজনে ১০ জন লেখক তাদের অনন্য ইসলামি সাহিত্যকর্মের জন্য বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হন। মাসউদুল কাদির, অনুপম সাহাবা দিয়ে শিশুসাহিত্যে অবদান রাখায় সম্মাননা লাভ করেন। মিরাজ রহমান, দ্য গ্রেটেস্ট অন্ট্রাপ্রেনর মুহাম্মাদ (সা.) বইয়ের মাধ্যমে মোটিভেশনাল সাহিত্যে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। জুবায়ের রশীদ, সাহাবিদের জ্ঞানচর্চার ইতিহাস বইয়ের জন্য ইতিহাস-জীবনী বিভাগে সম্মাননা পান। মুফতি শরিফুল ইসলাম নাঈম, বিশ্ববিখ্যাত ১০০ আলেম বইয়ের জন্য ইতিহাস-জীবনী বিভাগে পুরস্কৃত হন। সায়ীদ উসমান, দ্য টাইগার অব ফিলিস্তিন বইয়ের মাধ্যমে গল্প-উপন্যাসের জগতে বিশেষ অবদান রাখেন। আবদুল্লাহ আশরাফ, ঝিলামের রাজকন্যা গল্প-উপন্যাসের জন্য পুরস্কৃত হন। আবদুল্লাহ আল মুনীর, শরিয়তনামা বইয়ের জন্য গল্প-উপন্যাস বিভাগে সম্মানিত হন। মামুনুর রশীদ নদভী, সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বইয়ের মাধ্যমে অনুবাদ বিভাগে বিশেষ অবদান রাখেন। আবু নাঈম ফয়জুল্লাহ, মুহতামিমের রোজনামচা বইয়ের জন্য প্রবন্ধ-আলোচনা বিভাগে সম্মানিত হন। মিযানুর রহমান জামীল, শিউলি ফোটার দিনে বইয়ের মাধ্যমে ছড়া-কবিতা বিভাগে সম্মাননা গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের সভাপতি কবি মুনীরুল ইসলাম বলেন, ‘এই আয়োজন কেবল লেখকদের সম্মানিত করাই নয়, বরং সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের একটি প্রয়াস।’
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অনুষ্ঠানটি ছিল লিখিয়ে বন্ধুদের মিলনমেলা। সাহিত্য নিয়ে তরুণ লেখকদের মধ্যে নতুনভাবে কাজ করার উদ্যম তৈরি হয়েছে এই আয়োজনে। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম এখনও লেখকদের সৃষ্টিশীল কাজের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করে আসছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকরাও তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তারা জানান, এ ধরনের সম্মাননা ইসলামি সাহিত্যকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি ইসলামি ধারার লেখকদের নিয়ে কাজ করছে। প্রতিবছর লেখকদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে তারা গ্রন্থ ও প্রতিবেদন সম্মাননা প্রদান করে থাকে।
সম্মাননা পাওয়া বইটির নামকরণের বিষয়ে জানা যায়, ‘সাউথ ইন্ডিয়ার কর্নাটক রাজ্য সফরের সময় রত্নগিরি প্লাটফরমে যখন মঙ্গলা-লক্ষ্মদীপ এক্সপ্রেস স্থির হয়, তখন এক শিউলি গাছে চোখ পড়ে লেখকের। ছোট্ট ডালপালায় ফুটে থাকা চমৎকার শিউলিগুলো লেখকের ভেতর প্রচণ্ড নাড়া দেয়, ভারতবর্ষে এমন লাখো-কোটি মানুষ আছেন যাদের হৃদয়ে এখনও ঈমানের ফুল ফোটেনি। সেই দৃশ্যের প্রতি একপ্রকার মুগ্ধ হয়ে লেখক তার বইয়ের নাম দেন- শিউলি ফোটার দিনে। এটি তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ।
এতে স্থান পেয়েছে পঞ্চাশের বেশি ছড়া-কবিতা। এর মধ্যে জীবন গঠন, বরণ-মরণ, দেশ-ভাষা, গ্রাম- গঞ্জ, বাবা-মা, বন্ধু-সাথী, ঈমান-আমল, স্মৃতি-প্রীতি, আবেগ-অনুভূতি ও বিরহ-বেদনাসহ জাতি-সভ্যতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এর আগে ২০১১ সালে ‘এ্যাকশন’ নামে লেখকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়। তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ২৪ এর একুশে বইমেলায়। তার লিখিত বইয়ের সংখ্যা মোট ৩০টি। মিযানুর রহমান জামীল একজন বহুমুখী প্রতিভাধর লেখক ও ছড়াকার। তিনি কুমিল্লার আননূর মসজিদের খতিব এবং কমলসৈনিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের সহসাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও মিরপুর মাদরাসা দারুর রাশাদে শিক্ষকতার পাশাপাশি ১১ বছর যাবত মাসিক আর রাশাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত আছেন।
তিনি একাডেমিক পড়াশোনা শুরু করেন নোয়াখালীর খিলপাড়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে। এরপর জামিয়া ইসলামিয়া মাইজদী (আল আমিন মাদরাসা) নোয়াখালী ১০ বছর পড়াশোনা শেষ করে লক্ষ্মীপুর জামিয়া ইসলামিয়া আশরাফুল মাদারিস (বটতলী মাদরাসা) থেকে কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন
২০১৩ সালে ঢাকার মাদরাসা দারুর রাশাদ থেকে সাহিত্য ও সাংবাদিকতা বিভাগে উত্তীর্ণ হন। মুনশি মেহেরুল্লাহ একাডেমির থেকে ধর্মতত্ত্বে পড়াশনা করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজ সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন জীবন শুরু হয় ঢাকার জামিয়া বিন্নুরিয়া ইসলামিয়া থেকে। এরপর মাদরাসা দারুর রাশাদে এডুকেশন সেন্টারের নেগরান ও শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন।
পেশাগত জীবনে তিনি বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজের সাথেও জড়িত। তৈরি করেছেন আন-নূর ফাউন্ডেশন। বিভিন্ন বিষয়ের উপর তার ৩০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও সংকলন ১০টি, সম্পাদিত ১৬টি। অনুবাদ ৪টি।