প্রিয় মাতৃভূমির জন্য এমন কোনো পদক্ষেপ নেই যা নেননি ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। যার কারণে চিরশত্রু ইসরায়েল এমনকি পশ্চিমাদের চক্ষু শূল ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের জাঁদরেল এই নেতা। আমেরিকার কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরও কখনো মাথা নত করেননি। রাজি হননি আপোষেও।
তাইতো হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন মার্কিন সিনেটর রিক স্কট। পোস্টে তিনি বলেন, ‘তাকে (রাইসি) ভালোবাসা বা সম্মান নয়, এমনকি কেউ তাকে মিসও করবে না। যদি তিনি মারা যান, আমি সত্যিই আশা করি ইরানি জনগণ তাদের দেশকে খুনি স্বৈরশাসকের হাত থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে।’
এই উচ্ছ্বাস শুধু মার্কিন সিনেটরেরই নয়, যেন ইসরায়েল-আমেরিকার প্রতিচ্ছবি। তাই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন এটি নেহাত দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের বুকে কাঁপন ধরানো একমাত্র প্লেয়ার ছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। তাকে শেষ করতে পারলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইসরায়েলের দিকে মিসাইল তাক করার মতো আর কেউ নেই তা ভালো করেই জানেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
সন্দেহের আঙুল যাচ্ছে আমেরিকার দিকেও। কারণ একমাত্র ইরানের কারণেই মধ্যেপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রভাব কমেছে ওয়াশিংটনের। সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে আমেরিকার চরম শত্রু চীন। এ ছাড়া কাশেম সোলাইমানির মতো প্রভাবশালী জাঁদরেল নেতাকে হত্যা করতে একটুও বুক কাঁপেনি আমেরিকার। এমনকি বার বার হুঁশিয়ারি দিয়েও ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে ফেরাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ফলে রাইসিকে টার্গেট করতে পারে বাইডেন প্রশাসন সেই শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে খোদ ইরানের প্রশাসন এ নিয়ে কোনো কথা বলছে না। তারা এখন পর্যন্ত দুর্গম পাহাড়ে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনাকে দুর্ঘটনাই বলছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাইসি আজারবাইজানের সীমান্তের কাছে কিজ কালাসি এবং খোদাফারিন বাঁধ দুটি উদ্বোধন করেন। সেখান থেকে ফিরে তিনি ইরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। এরপরই দুর্ঘটনার খবর আসে গণমাধ্যমে। সাথে সাথে অভিযানে নামে দেশ-বিদেশের শত শত উদ্ধারকারী। তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে বেশ বেগ পেতে হয় দুর্ঘটনাকবলিত হেলিকপ্টার উদ্ধারে। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা পর হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের লোকেশন জানা যায়। এই দুর্ঘটনায় পাইলটসহ ৯ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছে।
এর আগে দুর্ঘটনার খবর শুনে প্রার্থনায় বসে যান ইরানের হাজার হাজার মানুষ। সারা রাত মসজিদে বসে নামাজ আর কোরআন তেলওয়াত করেন প্রিয় নেতার বেঁচে ফেরার জন্য।
এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।