তিন বছর কারাবন্দি থাকার পর গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক। মুক্তির পর তাকে স্বপদে বহাল করেছে সংগঠনটি। এতে উজ্জীবিত হয়েছেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। আসতে পারে নতুন কর্মসূচির ঘোষণাও।
মামুনুল হক হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন।
রবিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে (আইডিইবি) ‘বর্তমান জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম ও নতুন পাঠ্যপুস্তকের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক জাতীয় শিক্ষা সেমিনারে হেফাজত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান যুগ্ম-মহাসচিব পদে মামুনুল হককে বহাল রাখার ঘোষণা দেন। এতে উপস্থিত নেতাকর্মীরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন।
হেফাজত সূত্র বলছে, মামুনুল হক মুক্তি পাওয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে সংগঠনটিতে। এখন তারা নতুন করে কর্মসূচির কথা ভাবছে। সামনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পর নতুন কর্মসূচি আসবে বলে আভাসও দিয়েছেন নেতারা।
সংগঠনটির একাধিক নেতা বলেছেন, হেফাজতের এখনকার দাবি— তাদের নামে থাকা মামলাগুলো সরকারকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। সরকার সংগঠনকে দুর্বল করতেই একেকজনের নামে ৩০/৪০টা করে মামলা দিয়ে রেখেছে। হেফাজত ইসলাম তাদের মৌলিক দাবি আদায় আন্দোলন চালিয়ে যাবে, যার ঘোষণা আসছে।
হেফাজত ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক বলেন, ‘আইডিইবির জাতীয় শিক্ষা সেমিনারে মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান যুগ্ম-মহাসচিব পদে মামুনুল হককে বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এখনো হেফাজত ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে কারো কারো নামে ৩০/৪০টি করে মামলা আছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা।’
আজিজুল হক বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রত্যেকদিন নেতাদের আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। সংগঠনকে দুর্বল করতে নেতাদের নামে এসব মামলা দিয়ে রেখেছে। সরকারকে এসব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’
এ সময় হেফাজত মৌলিক দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে সামনের আন্দোলন-কর্মসূচি।’
সংগঠনটির আরেক যুগ্ম-মহাসচিব মীর ইদ্রিস নদভি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের এক নম্বর দাবি মামলা প্রত্যাহার করা। কারণ একেকজনের নামে ৩০/৪০টা মামলা থাকলে তো কেউ মুক্ত না। সামনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে, সেখান থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। তবে বৈঠকের তারিখ নির্ধারিত হয়নি এখনো।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি দল বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়। ওই সময় ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে সহিংস ঘটনায় আলোচিত ছিলেন মামুনুল হক। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জে হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
ওই ঘটনার পর পরই রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে নতুন করে বিতর্কে জড়ান মামুনুল হক। তুমুল বিতর্কের মধ্যেই ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের এক রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সঙ্গে থাকা নারী সঙ্গীকে নিজের স্ত্রী দাবি করেন মামুনুল হক। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। খবর পেয়ে হেফাজতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা রিসোর্টে গিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
ঘটনার পর থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করেন মামুনুল হক। এর ১৫ দিন পর ১৮ এপ্রিল ওই মাদরাসা থেকে মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলা করেন তার সঙ্গে রিসোর্টে অবরুদ্ধ হওয়া ওই নারী।
এরপর তার বিরুদ্ধে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে অনেক মামলা হয়। পরে সেসব মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থেকে তিন বছর ধরে কারাগারে ছিলেন তিনি।
সৌজন্যে ; ঢাকা টাইমস