বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১, ১২:০৬ অপরাহ্ন
যুবকণ্ঠ ডেস্ক;
গতকালকের একটি লেখায় আমি কওমী মাদ্রাসায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ডের সাথে দ্বিমত পোষণ করে কিছু কথা বলেছিলাম। সেক্ষেত্রে লালবাগ জামেয়ার নেয়া একটি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে কথা বলেছিলাম। আর এ কারণে একটি বড় ইসলামী দলের একজন দায়িত্বশীল আমাকে ছোট্ট একটি কমেন্ট করেছিলেন, সেটা হলো – “আপনি অনেক শর্ট রেঞ্জে চিন্তা করেন।” এর অর্থ কি আপনারা সকলেই জানেন। এ বিষয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। গতকাল থেকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছি, এমনভাবে বলার কী কারণ? আমি কওমী মাদ্রাসার বিগত ৫০বছরের রাজনৈতিক অর্জনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলেছিলাম যে, মাদ্রাসার চার দেওয়ালের নিরাপত্তার ভিতর থেকে রাজনীতি করার সুযোগ থাকায় গোটা বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই অনুভব করছেন না। হঠাৎ কোন ইস্যু আসলো, আর নিজ মাদ্রাসার শ’পাঁচেক ছাত্র নিয়ে একটা বিক্ষোভ করলো, বেশ, দায়িত্ব শেষ হয়ে গেলো। এই সুবিধাটা থাকায় কওমী মাদ্রাসার উলামায়ে কেরাম বৃহত্তর পরিসরে রাজনীতি করার গুরুত্ব অনুভব করছেন না। আমার মুল বক্তব্য ছিল, কওমী মাদ্রাসা যেহেতু অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতাও পায় না। জনগণের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়েই চলতে হয়, সেহেতু একেকটি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক যে রাজনৈতিক দল করার মানসিকতা গড়ে উঠেছে, অথবা বাস্তবে যেভাবে এর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি বড় রেঞ্জে কওমী আলেমদের রাজনৈতিক মঞ্চটাই নষ্ট করে দিচ্ছে। কোন কওমী মাদ্রাসাতেই প্রকাশ্যে রাজনীতি চলে না। তদুপুরি কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রধান বা শীর্ষ নেতৃত্ব মাদ্রাসার মুহতামিম হওয়ায় ঐ বিশেষ কয়েকটি মাদ্রাসায় অন্য কোন দল করার সুযোগ নেই, অনুমতিও নেই, পরিবেশও নেই। আবার উনাদের রাজনীতিটা হয় দ্বি-মুখি। মাদ্রাসা সম্পুর্ণ অরাজনৈতিক, মুহতামিম নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রধান। ফলে এক ধরণের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। এতে উলামাদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক ময়দানে স্থায়ী আসন গড়তে সাহায্য করে না। দেশের সাধারণ ধারার রাজনৈতিক দলগুলো কওমী ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব কারণে যথেষ্ট মূল্যায়ন করেন বলে আমার কাছে মনে হয় না। উপরুন্ত রাজনৈতিক দলের প্রধান কোন একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল হওয়ায় উনাদেরকে চাপে ফেলে বড় দলগুলো রাজনৈতিক সুযোগ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যেহেতু কওমী মাদ্রাসা চলে জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায়। সেখানে কিছু দিয়ে দিলে মুহতামিম সাহেবের পক্ষে তেমন কোন উচ্চ-বাচ্য করার সুযোগ থাকে না। আমার প্রস্তাব ছিল, কওমী মাদ্রাসাগুলো যেভাবে সবসময় বাতিলের বিরুদ্ধে রণহুঙ্কার দিয়ে এসেছে, অরাজনৈতিক রাজনীতি করে এসেছে, সেটাই অব্যাহত থাকুক। আর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো মাদ্রাসাকেন্দ্রিক না হয়ে স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করুক। আমার পুরো লেখাটাই ছিল কওমী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনীতি নিয়ে। আমার পুরো লেখার কোথাও কোন প্রকার আকারে-ইঙ্গিতেও ঐ বিশেষ বড় ইসলামি দলকে কোন প্রকার প্রসঙ্গ ছিল না। তারপরও কেন আমাকে এমন শর্ট-রেঞ্জে আর বর্ডরেঞ্জের প্রসঙ্গ এনে ছোট করার চেষ্টা করলো সেটা আমার কোনভাবেই বোধগম্য হলো না। দেশের উলামায়ে কেরাম যদি মাদ্রাসাগুলোকে শাসকদের রক্তচক্ষুর আড়ালে রেখে সরাসরি রাজনৈতিক ময়দানে আসেন, দেশের সকল শ্রেনি-পেশার মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করেন, সেটা দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে, নাকি কওমী মাদ্রাসার অভ্যন্তরে নিরাপদে, নির্ভাবনায়, ফলাফলহীন যুগের পর যুগ রাজনীতি করে গেলে সেটা হবে দীর্ঘমেয়াদি ফলপ্রসু সেটা আমার কাছে পরিস্কার হলো না। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সবাই চায় কওমী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনীতি মাদ্রাসার অভ্যন্তরেই ব্যস্ত থাকুক। মাঝে মাঝে একটু নড়াচড়া দিয়ে শুয়ে পড়ুক, আর এ সুযোগে ইসলামী অঙ্গনের মূলধারার রাজনীতিটা তারা চালিয়ে যাক নির্ভাবনায় এটা নিশ্চিত করতেই আমাকে এমন তুচ্ছভাবে আক্রমন। বাংলাদেশে কওমী ধারার রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে মৌসুমি রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে এটা তো হেফাজতের কাজ, এটা কোন অবস্থাতেই রাজনৈতিক কোন দলের একমাত্র কাজ হতে পারে না। তাসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দোলন, সালমান রুশদি বিরোধী আন্দোলন, কাদিয়ানি বিরোধী আন্দোলন, দাউদ হায়হার বিরোধী আন্দোলন, শাহবাগের নাস্তিকতার ঢেউ বিরোধী আন্দোলন এসব করার জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়ত, ইসলামী ঐক্যজোট, নেজামে ইসলাম ইত্যাদি দলের কোনই প্রয়োজন নেই। এর জন্য মুফতি আমিনী রহ. ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছিলেন, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ করেছিলেন, আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বে হেফাজত আন্দোলন করেছে। আমার বক্তব্য হলো, যেই দলগুলোর নাম এখানে উল্লেখ করলাম, তাদের কাজ এসব নিয়েই শুধু পড়ে থাকা নয়, এসব করার জন্য আজ হেফাজত আছে, আগামী দিনে অন্যকোন নামে নতুন ব্যানার আসবে। অতীতে নানা সময়ে অসংখ্য ব্যনার তৈরি হয়েছে। আগামীতেও হবে। কিন্তু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় স্বার্থে দেশের জন্য বিশেষ কী ভুমিকা পালন করতে পেরেছে? রাজনীতিতে ঐ দলগুলোর কী ভূমিকা কতটুকু? আমার চাওয়া ছিল দীর্ঘমেয়াদি। উনারা একেকটি দল একেকটি মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করেই মূলত: পরিচালনা করেন। যে কারণে স্বাধীনতার ৫০বছরেও দলগুলো নিজেদেরকে সমাজের নানা অসংঘতির মোকাবেলায় অপরিহার্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারেনি। এটা না হওয়ার পেছনে বড় বাধা ঐ একটি্ই। সেটা হলো, মাদ্রাসার সীমিত গন্ডীর ভিতরে থেকে রাজনীতি করার সুযোগ। আমি বলছিলাম, উনাদের রাজনীতির ব্যানারটাকে মাদ্রাসার চারদেওয়ালের বাইরে নিয়ে আসুক। আমি এ কথা বলি নাই যে, মাদ্রাসাগুলোতে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হোক। আমার এ চাওয়াটা কি অপরাধ ছিল? এটা কি শর্টরেঞ্জের ভাবনা ছিল? আমি বুঝতে অক্ষম। গত ৫০বছরে কওমী ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর অর্জন খুব সামান্য। এর জন্য আমরা যতটা দায়ী, রাষ্ট্র ততটা দায়ী নয় বলেই আমি মনে করি। আমরা সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারিনি। এটা আমাদের জাতীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতা। আমরা আমাদের রাজনীতিটাকে সমাজের সর্বস্তরে নিয়ে যাওয়ার কোন চেষ্টাই করিনি। আগে মাদ্রাসার পদ ধরে রাখা, তারপর যতটুুকু সুযোগ পাওয়া যায়