শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন
সৈয়দ শামছুল হুদা ||
গতকাল বাদ জুমা বায়তুল মুকাররম মসজিদে সংঘটিত ঘটনার ধারাবাহিক ভিডিওটা দেখেছি। মানবজমিন পেইজ থেকে প্রায় পৌনে দুই ঘন্টার ভিডিওতে এটা খুব পরিস্কার যে, পুলিশ খুব পরিকল্পিতভাবে গতকালকের ঘটনায় ইন্ধন যুগিয়েছে। বায়তুল মুকাররমে যখন সাধারণ মুসুল্লিরা কোন দলের ইন্ধন ছাড়া নিজেদের উদ্যোগে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার প্রস্তুতি নেয়, তখন মসজিদের বাইরে পুর্ব থেকে প্রস্তুতিতে থাকা সশস্ত্র একদল হেলমেটধারি লোক সাধারণ মুসুল্লিদের গণপিটুনি দিতে থাকে। এবং পুলিশ এদের শেল্টার দেয়। অতঃপর মুসুল্লিরা যখন মসজিদের ভেতর থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করে তখন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পুলিশি প্রোটেকশনে মসজিদের ভেতরে পাঠিয়ে দিয়ে মুসুল্লিদের লাঞ্ছিত করে। প্রাথমিক প্রতিরোধের পর তারা মসজিদ থেকে সরে পরে। এবং প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশের সাথে পুনরায় মসজিদে এসে হামলায় শরীক হয়।
মানবজমিন পেইজ থেকে প্রচারিত ভিডিওতে বারবার এ কথাটি বলা হয়েছে যে, পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ সশস্ত্র অবস্থায় একই জায়গায় অবস্থান নেয়। ভিডিওতে দেখা যায়, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মুক্তাঙ্গন মোড় থেকে পুলিশের জলকামানের পাহারায় তারা ধীরে ধীরে মসজিদের গেইট পর্যন্ত আসে। অতঃপর তারা গেইট পার হয়ে ভেতরে ঢুকে মুুসুল্লিদের পেঠায়। ভেতর থেকে মুসুল্লিরা ইটপাটকেল মেরে এদেরকে মসজিদে প্রবেশ ঠেকিয়ে রাখে। মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসি দেখেছে কীভাবে পুলিশি সহযোগিতায় সন্ত্রাসীরা মুসুল্লিদেরকে হামলা করেছে।
পুলিশ যদি চাইতো এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাক তা মুহুর্তেই হয়ে যেতো। কিন্তু পুলিশ সেটা করে নাই। বরং পুলিশ বারবার শুধূ টিয়ারশ্যালই নয়, সরাসরি অসংখ্য গুলি বর্ষণ করে মুসুল্লিদের দুর্বল করতে চেয়েছে। দীর্ঘ প্রায় দেড়ঘন্টার পর বায়তুল মুকাররম এর উত্তরগেইটে আওয়ামীলীগের কোন বড় নেতা হেলমেট পরে এসে নেতাদের কী পরামর্শ দেয়, এর দু’তিন মিনিটের মধ্যে উত্তর গেট থেকে জলকামাল, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র লোকেরা পশ্চিম দিকে সরে পরে। এরপর পুলিশের কয়েকজন দায়িত্বশীল হাত তুলে ধীরে ধীরে মসজিদের ভিতরে ঢুকে তাদের আশ্বস্ত করে যে, তারা নিরাপদে মুসুল্লিদের বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিবে। অতঃপর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বায়তুল মুকাররম এর সমস্যার সমাধান হয়। তাহলে এটা বুঝা গেলো যে, পুলিশ চাইলে মুহুর্তেই বায়তুল মুকাররম এর সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। কিন্তু সরকার ভিন্নকোন উদ্দেশ্যে এটাকে দীর্ঘায়িত করে।
ইতিমধ্যেই হাটহাজারীতে ঈমানী তাগিদে রাস্তায় নেমে আসে ছাত্র জনতা। যদিও ততক্ষণেও কোন নেতা, কোন দল কোন কথা বলেনি, তার দিকে ছাত্র জনতা অপেক্ষায় থাকেনি। আমি সেই সকল বীর সাহসীদের স্যালুট জানায়। সেখানেও পুলিশ প্রতিবাদকে সামান্য সহ্য করেনি। তারা ছাত্রদের ওপরে সরাসরি ব্রাশফায়ার করে। এতে ৪জন ছাত্র শহীদ হয়। হাটহাজারীর দেখাদেখি বি.বাড়িয়ায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রাবাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এটা সম্পূর্ণরূপে ঈমানী আন্দোলন। বায়তুল মুকাররমে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ যা করেছে তা কোন ঈমানদার সহ্য করতে পারে না। যারা মানবজমিন প্রচারিত ভিডিওটি দেখেছে তারা অবশ্যই স্বীকার করবে যে, এর জন্য একতরফাভাবে সরকারই দায়ী। একসাথে প্রায় ৮০হাজার লোক ভিডিওটি দেখেছে।
বায়তুল মুকাররম এর আন্দোলন হেফাজতের ছিল না, মামুনুল হকেরও ছিল না, ইসলামী আন্দোলনেরও ছিল না। এটা ছিল স্বত:স্ফুর্ত আন্দোলন। এই আন্দোলনে যখন লাশ পরে যায়, তখন সেটা হেফাজতের দায়িত্ব হয়ে যায় নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া। হেফাজত কর্মসূচী ঘোষণা করে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে। হরতাল এবং বিক্ষোভ কর্মসূচীকে আমি যথার্থ মনে করি। এর কোন বিকল্প ছিল না। ঈমানী আন্দোলনে হেফাজত নীরব থাকলে সেটা হতো হেফাজতের জন্য কলঙ্কজনক। অনেকে হয়তো অনেক ব্যাখ্যা দিবেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এর বাইরে অন্য পথে যাওয়ার আর কোন সুযোগ ছিল না। দেশবাসির প্রতি আবেদন, ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে সকলেই এই আন্দোলনে শরীক হোন।
লেখক : জেনারেল সেক্রেটারী, বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট-বিআইএম