শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন
যুবকণ্ঠ ডেস্ক;
মাহে রমজানের আলোচনা।
-উম্মে মাবাদ
রমজান শব্দটি ফারসি। এর আরবি পারিভাষিক অর্থ সওম, বহুবচনে তাকে সিয়াম বলা হয়।
সওম অর্থ বিরত থাকা, পরিভাষায় সওম বলা হয়
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে, ফজর থেকে মাগরিব পরযন্ত যাবতীয় পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা৷
একটা কথা জানা জরুরী যে, শেষ উম্মতের জন্যে তথা, আমাদের শেষ নবী থেকে এ বিধান শুরু হয়নি।
বরং এর বহু আগে থেকে’ই মুমিনদের জন্যে এ বিধান জারি ছিলো। তবে সবে কদর এর আগে ছিলো না।
দ্বিতিয় হিজরির সাবান মাসে, মদিনায় রমজান সংক্রান্ত প্রথম আয়াত নাজিল হয়।
হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো
যেভাবে করা হয়েছে, তোমাদের পুর্ববর্তীদের ওপর।
যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো। যাতে তোমরা সংযমী হতে পারো”। ( সুরা বাকারাহ,আয়াত ১৮৩ )
রোজা রাখার ফায়দা
আবু হুরাইরা (রা,) থেকে বর্ণিত
নবীজি ( সা,) এরশাদ করেছেন,
যখন রমজান মাস আসে, আসমানের সব দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। এবং দোজখের সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়। বড় বড় শয়তানগুলো কে আটক করা হয়।
হজরত আবু হুরাইরা (রা,) আরও বর্ণনা করেন
নবি করিম (সা,) বলেন, প্রত্তেক বস্তুর যেমন জাকাত রয়েছে, অনুরুপ! প্রত্তেক মানুষের জাকাত রয়েছে
আর এই জাকাত হচ্ছে, রোজা পালন করা।
হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, সিয়াম এবং কোরআন হাশরের ময়দানে আল্লাহর কাছে, মমুমিন বান্দা–বান্দীর জন্য সুপারিশ করবে এবং আল্লাহ্ তাআলা তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করবেন।
শবে কদরের আলোচনা
শবে কদর উম্মতের জন্য আল্লাহ পাকের মহান দান। এটা কেবল এ উম্মতেরই বৈশিষ্ট্য। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা শবে কদর আমার উম্মতকেই দান করেছেন; পূর্ববর্তী উম্মতকে নয়।
ইমাম মালিক (রহ.) সূত্রে বর্ণিত আছে, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সংবাদ দেওয়া হলো যে, আপনার উম্মতের বয়স অন্যান্য উম্মতের তুলনায় কম হবে, তখন তিনি আল্লাহর সমীপে নিবেদন করলেন, হে আল্লাহ! তাহলে তো পূর্ববর্তী উম্মতগণ দীর্ঘ জীবন পেয়ে ইবাদত ও সৎকর্মের মাধ্যমে যে স্তরে উপনীত হয়েছে, আমার উম্মত সে স্তর লাভ করতে পারবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা রাসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লাইলাতুল কদর দান করেন এবং এটাকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে ঘোষণা দেন।
তাছাড়া যেহেতু কুরআন নাজিলের রাত,
তথা (শবে কদর) রমজান মাসের মধ্যেই রয়েছে।
তাই এই রাত, আরও হাজারটি রাতের থেকেও মুল্যবান
১ এই রাতে সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়,
২ এই রাতে সকল দোয়া কবুল হয়
৩ এই রাতে আল্লাহর অশেষ নিয়ামতে ভর্তি
পূূর্ণ রমজান সম্পর্কে আলোচনা
রমজানের ত্রিশ দিন তিন ভাগে বিভক্ত
১/রহমত ২/মাগফিরাত ৩/ নাজাত
রহমত
রহমত এর শাব্দিক অর্থ, দয়া,অনুগ্রহ
রমজানের প্রথম দশ দিন রহমত দ্বারা হয়,
এই দশ দিন আল্লাহ তায়ালা রহমত বর্ষিত করে
মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে এবং এই দশ দিনে’ই সমস্ত দোয়া কবুল করে নেন।
মাগফিরাত
মাগফিরাতের শাব্দিক অর্থ, ক্ষমা
মাগফিরাতের এই দশ দিন, তাওবা করলে
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তার যাবতিয় গুনাহ থেকে ক্ষমা করে দেন।
নাজাত
নাজাতের শাব্দিক অর্থ মুক্তি,
নাজাতের এই দশ দিনে, আল্লাহ তায়ালা
তার বান্দা বান্দিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
তারাবি নামাজ এর আলোচনা:
এশার সালাতের (ফরজ ও সুন্নতের) পর বিতরের আগে দুই রাকাত করে মোট ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত। এবং সূরা তারাবি থেকে খতমে তারাবি আদায় করা বেশী উত্তম।
রোজাদারের জন্যে দুটি সু’সংবাদ
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল পাক (সা.) ইরশাদ করেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে, একটি তার ইফতারের সময়, অপরটি হলো আল্লাহ্ তাআলার দিদার বা সাক্ষাতের সময়। হাদিসে আরও উল্লেখ রয়েছে, ইফতারের সময় দোয়া কবুলের সময়। আল্লাহ্ তায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করেন।
নিচের দোয়াটিও বিশেষভাবে পড়া যায়-
اَلْحَمْدُ للهِ اَللّهُمَّ إنِّيْ أسْئَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْئٍ أنْ تَغْفِرَلِيْ.
উচ্চারণ : ‘আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিআত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরলি।’
অর্থ : ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য; হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার সর্ববেষ্টিত রহমতের উসিলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানের ফজিলত জেনে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।