বৃহস্পতিবার, ০৮ Jun ২০২৩, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন
পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী তাদের ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। নির্ধারিত মেয়াদের আগেই নানা কারণে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছে তাদের। লিয়াকত আলী খান পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী৷ ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নির্বাচিত হন। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডিতে আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন। মৃত্যুর আগে ৪ বছর ২ মাস প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
লিয়াকত আলী খান নিহত হওয়ার একদিন পর ১৯৫১ সালের ১৭ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণ করেন খাজা নাজিমুদ্দিন৷ ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল নাজিমুদ্দিনকে গভর্নর জেনারেল প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন৷ একই দিন গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী বগুড়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন৷ কিন্তু, ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।
১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট পাকিস্তানের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হন চৌধুরী মোহাম্মদ আলী৷ ১৯৫৬ সালের সংবিধানে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য পাকিস্তানে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর নাম এখনো উচ্চারিত হয়৷ কিন্তু, ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দলের সদস্যদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তিনি পদত্যাগ করেন।
১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী৷ কিন্তু, ইস্কান্দার মির্জার সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালের ১৭ অক্টোবর পদত্যাগ করেন৷ ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগার ১৯৫৭ সালের ১৭ অক্টোবর ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন৷ ১৬ই ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন তিনি।
১৯৫৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ফিরোজ খান নুনকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে উন্নীত করেন ইস্কান্দার মির্জা৷ কিন্তু, ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন জারির সময় নুনকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করেন।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর দীর্ঘ ১৩ বছর সামরিক আইন জারির পর স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের প্রশাসনের অধীনে নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজয়ের পর ২০ ডিসেম্বর আমিনকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷
১৯৭৩ সালের ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হন জুলফিকার আলী ভুট্টো৷ তিনি ১৯৭৭ সালে পুনরায় সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন৷ কিন্তু, সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি কারাবন্দি হন এবং ১৯৭৯ সালে ৫ জুলাই ফাঁসি হয় তার৷
মুহাম্মদ খান জুনেজো ১৯৮৫ সালের ২৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷ তবে, ১৯৮৮ সালের ২৯ মে জুনেজোর সরকার বরখাস্ত করা হয়৷ জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো ১৯৮৮ সালের ২ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন৷ ১৯৮৯ সালে তার দল অভিশংসন থেকে বেঁচে যায়৷ কিন্তু, ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি গুলাম ইসহাক খান তাকে সরিয়ে দেন৷
১৯৯০ সালের ৬ নভেম্বর দায়িত্ব নেন নওয়াজ শরীফ৷ কিন্তু, ১৯৯৩ সালে আবারও রাষ্ট্রপতি গুলাম ইসহাক খান একটি নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করেন৷ পরে সুপ্রিম কোর্ট শরীফের সরকারকে পুনর্বহাল করেন৷ কিন্তু, ১৯৯৩ সালের ১৮ জুলাই নওয়াজ শরীফ এবং গুলাম ইসহাক খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বেনজির ভুট্টো ১৯৯৩ সালের ১৯ অক্টোবর পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন৷ কিন্তু, রাষ্ট্রপতি ফারুক লেঘারি ১৯৯৬ সালের ৫ নভেম্বর তার সরকারকে বরখাস্ত করেন৷ ১৯৯৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পর পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন নওয়াজ শরীফ৷ তবে, ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর জেনারেল পারভেজ মোশাররফ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং নওয়াজ শরীফকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন।
২০০২ সালের নভেম্বরে জাফরুল্লাহ খান জামালি স্বৈরশাসক পারভেজ মোশারফের অধীনে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন৷ কিন্তু, ২০০৪ সালের ২৬ জুন মোশাররফ তাকে বরখাস্ত করেন৷ চৌধুরী সুজাত ২০০৪ সালের ৩০ জুন পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন৷ শওকত আজিজ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন সুজাত৷ শওকত আজিজ ২০০৪ সালের ২৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন৷ পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব ত্যাগ করেন৷
২০০৮ সালের ২৫ মার্চ সাধারণ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী হন ইউসুফ রাজা গিলানি৷ তার দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন অর্জন করে৷ কিন্তু, ২০১২ সালে শীর্ষ আদালত অবমাননার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷
পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদ শেষ করতে গিলানির কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন রাজা পারভেজ আশরাফ৷ ২০১২ সালের ২২ জুন থেকে ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ৫ জুন তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ শরীফ৷ পাকিস্তানের পূর্ববর্তী সব প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় এখন পর্যন্ত তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক অভিশংসিত হওয়ার আগে তিনি ৪ বছর ৫৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন।
নওয়াজ শরীফকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে শাহীদ খাকান আব্বাসিকে ২১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ কিন্তু, ২০১৮ সালের ৩১ মে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়৷ কারণ নতুন নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট ২২তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইমরান খান৷ ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারান ইমরান খান।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে