বৃহস্পতিবার, ০৮ Jun ২০২৩, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন
রাকিবুল হাসান নাঈম:
তাকমিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য ফযিলত (মেশকাত) ও সানাবিয়াতে (শরহেবেকায়া) উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক করে গতকাল বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ। বোর্ডের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বেফাকভুক্ত সকল মাদরাসার মুহতামিমদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আলহাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর নেসাব উপ-কমিটির সিদ্ধান্ত এবং স্থায়ী কমিটি কর্তৃক অনুমােদনের ভিত্তিতে ১৪৪৬-১৪৪৭ হিজরী শিক্ষাবর্ষ থেকে দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) পরীক্ষায় নিবন্ধনের জন্য ফযিলত এবং সানাবিয়াতে ৬ বাের্ডের যে কোন বাের্ড হতে উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে বেফাকের অনুষ্ঠিতব্য ৪৬তম (১৪৪৪ হি.) কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সানাবিয়া মারহালায় উত্তীর্ণ না হলে ০২ বছর পর ১৪৪৬ হিজরীতে ‘ফযিলত’ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না এবং ১৪৪৭ হিজরী সনে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর অধীনে ‘তাকমীল’ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কোন সুযােগ থাকবে না।
এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আলোচনায় উঠে এসেছে মাদানি নেসাবের প্রসঙ্গটি। কারণ বেফাকের পাঠ্যক্রম এবং মাদানি নেসাবের পাঠ্যক্রম আলাদা। বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাতে একটা সময় অংশগ্রহণ করতো না মাদানি নেসাবের শিক্ষার্থীরা। এখনও করে না অনেক মাদরাসা। বেফাকও শিথিল ছিল। তাকমিল পরীক্ষায় বসতে লাগতো না আগের কোনো কেন্দ্রীয় পরীক্ষার সার্টিফিকেট। ফলে মাদানি নেসাব সমাপ্ত করে এসেও তাকমিল পরীক্ষায় বসতে পারতো শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এখন বেফাক কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলো বাধ্যতামূলক করায় জটিলতা তৈরী হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এই নেসাবটি বেফাকের সঙ্গে কিভাবে সমন্বয় করবে, আদৌ সমন্বয় করবে কিনা। উভয়পক্ষের সংশ্লিষ্টগণ বলছেন, বেফাকের সঙ্গে সমন্বয়টাই সবচে বড় সমাধান।
সমন্বয়ে আগ্রহী মাদানি নেসাব
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদানি নেসাবের প্রাণকেন্দ্র মাদরাসাতুল মদীনায় দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত বিভাগ আছে। তবে সেখানে বেফাক এবং হাইয়াতুল উলয়ায় অধীনে কোনো পরীক্ষা হয় না। মাদরাসা কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে আগ্রহী না। দাওরার পর তারা ছাত্রদেরকে বিভিন্ন তাখাসুস বিভাগে ভর্তি করিয়ে দেন। মাদানি নেসাবের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণকারী মাদরাসা নেই বললেই চলে। মূল কিতাবগুলো এক থাকলেও বৈপরিত্য দেখা যায় বিভিন্ন কিতাবে। মাদানি নেসাবের কোনো মাদরাসা তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত, কোনোটা জালালাইন পর্যন্ত, কোনোটা পঞ্চম বর্ষ পর্যন্ত। তবে অধিকাংশ মাদরাসাই বেফাকের সঙ্গে সমন্বয়ে আগ্রহী। তারা অনেকে শরহেবেকায়া জামাত খুলে বেফাকের অধীনে পরীক্ষা দেয়াও শুরু করেছেন।
মারকাযুল উলূম আল-ইসলামিয়া, করটিয়া, টাঙ্গাইলের শিক্ষক মাওলানা আলামিন ফেরদাউস জানান, তার মাদানি নেসাবের মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তিন-চার বছর হবে। এ বছরই প্রথম চতুর্থ বর্ষ খোলা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বেফাকের সেঙ্গ যুক্ত হবার।
বাইতুস সালাম মাদরাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং আহলে সুফফাহ মাদানি নেসাব মাদরাসা, শ্রীপুরের শিক্ষক মাওলানা রাদ তানভীর বলেন, ‘অধিকাংশ মাদানি নেসাব মাদরাসা শরহেবেকায়া জামাত খুলে বেফাকের সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়েছে। যারা সমন্বয় করে নিয়েছে, তাদের কোনো সমস্যা হবে না।
মাদানি নেসাবের আরেক মাদরাসা মাদরাসাতুল মুত্তাকিন ঢাকার শিক্ষক মাওলানা ওলিউর রহমান জানান, তার মাদরাসায় জালালাইন পর্যন্ত বিভাগ আছে। তারাও শরহেবেকায়া খুলে বেফাকের সঙ্গে সমন্বয় করেই চলছেন।
কথা হয় জামিয়াতুস সালাম, উত্তরার শিক্ষক মাওলানা বশীর আহমদের সঙ্গে। তিনি জানান, বেফাকের বর্তমান ঘোষণায় মাদানি নেসাবের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ, বেফাক শরহেবেকায়া বাধ্যতামূলক করেছে। বাইতুস সালামসহ আরও অনেক মাদরাসা শরহেবেকায়া জামাত খুলে বেফাকের সঙ্গে সমন্বয় করেছে আগেই। জামিয়াতুস সালামও শরহেবেকায়া জামাত খুলেছে। কিন্তু মাদরাসাতুল মদীনা বেফাক বা হইয়া কারও অধীনেই পরীক্ষা দিতে আগ্রহী না। এ নিয়ে তাদের মাথাব্যথাও নেই।’
বেফাকের সঙ্গে সমন্বয় করতে কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি। বরং সমন্বয় করাটাকেই তিনি জোর দিচ্ছেন। তবে তার দাবি হলো, বাধ্যতামূলক করার পক্রিয়া যেন আর নিচে না নামে। যেমন নাহবেমির যেন আর বাধ্যতামূলক করা না হয়। তাহলে মাদানি নেসাবের ছাত্ররা বিপদে পড়বে। কারণ, মাদানি নেসাব তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত নিজস্ব সিলেবাসে চলে। চতুর্থ বর্ষে থাকে শরহেবেকায়া। যদি নাহবেমির থেকে বাধ্যমূলক করা হয়, তাহলে মাদানি নেসাবেই একটা ধ্বস নামবে।
মাদানি নেসাব নিয়ে আলাদা চিন্তা নেই বেফাকের
তবে কয়েক বছর পর নাহবেমিরও বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন বেফাকের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘এখন সানাবিয়া এবং ফজিলত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হাইয়াতুল উলয়া চাচ্ছে, তাকমিল পরীক্ষায় বসতে হলে এ দুটো সার্টিফিকেট লাগবে। যে যেই নেসাব থেকেই আসুক, সেটা দেখার বিষয় না। বিষয় হচ্ছে, তাকমিল পরীক্ষায় বসতে হলে এ দুটো সার্টিফিকেট শো করতে হবে। সামনে হয়তো নাহবেমিরও বাধ্যতামূলক করা হবে। তবে সেটা দেরী আছে।’
নাহবেমির বাধ্যতামূলক করা হলে মাদানি নেসাবের শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়েব। এ বিষয়ে বেফাক কর্তৃপক্ষের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্তৃপক্ষ মাদানি নেসাব নিয়ে আলাদা কোনো চিন্তা করছে না। তবে আমরা চাইছি, তারা তাদের সিলেবাসে একটু অদলবদল করে বেফাক বা হইয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাক।’ তবে সিলেবাস, সমন্বয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বোর্ডের সঙ্গে মাদানি নেবাসের কোনো আলোচনা হয়নি এবং এমন কোনো উদ্যোগও নেই বলে জানিয়েছেন বেফাকের মহাপরিচালক। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে না বললেও ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে কেউ কেউ আলোচনা করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। যার সঙ্গেই কথা হচ্ছে, তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন, কয়েক বছর পর নাহবেমিরও বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
ফাতাহ ২৪.কম এর সৌজন্যে