মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :

‘এটাই আমার মায়ের লাশ’, দাবি মেয়ে মরিয়মের

খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমের (৫২) মরদেহ শনাক্ত করেছেন তার ছোট মেয়ে মরিয়ম মান্নান। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা থেকে প্রায় ৩৫৭ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় গিয়ে মাকে শনাক্ত করেন তিনি।

এর আগে নিখোঁজ মায়ের খোঁজে মেয়ে ছুটেছেন দুয়ারে দুয়ারে। জীবিত পাননি মাকে। অবশেষে ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি লাশের বিভিন্ন আলামত ও কাপড় দেখে মরিয়ম বললেন, ‘এটাই আমার মা।’ যদিও দৌলতপুর থানা পুলিশ, মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও ময়মনসিংহ পুলিশ বলেছে, ডিএনএ পরীক্ষার পরই বিষয়টির চূড়ান্ত সমাধান হবে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুরের বওলা ইউনিয়নের বওলা পূর্বপাড়া গ্রামের একটি কবরস্থানে মেলে বস্তাবন্দি লাশ। পাশের একটি মসজিদের নির্মাণকাজ করা শ্রমিকেরা দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে লাশটির সন্ধান পায়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে অজ্ঞাত হিসেবে ১১ সেপ্টেম্বর লাশটি ময়মনসিংহের আঞ্জুমানে হেমায়েত কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় ফুলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সবুজ মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাতে নারীর বয়স উল্লেখ করা হয় ২৮ বছর।

যদিও ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া নারীর লাশটি মায়ের বলে দাবি করেছেন মেয়ে মরিয়ম। রহিমা দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা এলাকার প্রয়াত মান্নান হাওলাদারের স্ত্রী। আর তার মেয়ে মরিয়ম তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।

ফুলপুর থানায় মায়ের লাশ শনাক্ত করছেন মেয়েরা। ছবি: আমাদের সময়

আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ফুলপুর থানায় যান মরিয়ম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বোন মনি, মাহফুজা আক্তার, আদরী আক্তার, ভাবী, চাচাতো ভাই রুম্মান হোসেন ও মরিয়মের এক ভাতিজা। পুলিশের কাছে সংরক্ষিত বিভিন্ন আলামত দেখানো হয় তাদের। এ সময় পায়জামা ও মাথার চুল দেখে ‘এটাই আমার মা রহিমা’ বলে শনাক্ত করেন মেয়ে মরিয়ম। পরিবারের অন্যরাও একই দাবি করেন। এ সময় তাদের আহাজারিতে সেখানে বেদনাঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রহিমাকে প্রতিপক্ষরা হত্যার পর ফুলপুরে এনে ফেলে গেছে বলে ধারণা স্বজনদের।

এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের মরিয়ম বলেন, ‘মাকে চিনতে আসলে কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না। আমি নিশ্চিত এটাই আমার মায়ের লাশ। পায়জামাটা আমার মায়ের। আমার মায়ের ওপর যারা হামলা করেছিল, তারাই এটি (হত্যা) করেছে।’

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টে মরিয়ম লেখেন, ‘লাশটা পঁচা-গলা অবস্থায় পেয়েছেন তারা (পুলিশ)। অফিসিয়াল প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার মায়ের কপাল, আমার মায়ের হাত, আমার মায়ের শরীর- আমি কিভাবে ভুল করি! আমি সন্দেহ করি এটা আমার মা। অফিসিয়াল কাজের পরে আমি নিশ্চিত করব।’

গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নামেন খুলনার রহিমা। এরপর তিনি আর বাসায় ফেরেননি। নিখোঁজের ঘটনায় ছেলে মো. সাদী দৌলতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন তার মেয়ে আদরী বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ ছাড়া বিষয়টি র‌্যাবকেও জানানো হয়। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ফুলপুরে লাশ উদ্ধারের পর যে মামলা হয়েছিল সেটি তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবদুল মোতালিব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মেয়েরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করছে এটিই তাদের মা। তবে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই সেই ব্যবস্থা করা হবে।’

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘অজ্ঞাত পরিচয় ওই নারীর লাশ শনাক্ত করতে তার মেয়েরা এসেছিল। তারা কাপড়-চোপড় দেখে ধারণা করছেন, লাশটি তাদের মায়ের হতে পারে। লাশের ডিএনএ পরীক্ষায় আগ্রহী তারা। বিষয়টি আগামী রোববার আদালতে তুলে ধরা হবে। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হবে লাশটি মরিয়মের মায়ের কি না।’

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

All rights reserved © Jubokantho24.com