সোমবার, ০৫ Jun ২০২৩, ১০:১৭ অপরাহ্ন
— এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ
মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহিমাহুল্লাহু তায়ালা। শুধুমাত্র একটি নাম নয়। একটি বিপ্লব ও সংগ্রাম। একটি চেতনা ও প্রেরণা। তার প্রতিভা ও কর্মে মুখরিত বিশ্ব। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও সংগ্রামী সিপাহসালার। তিনি যেমন একাধারে জ্ঞানতাপস। দক্ষ শিক্ষক। প্রতিথযশা আলেম। সুবক্তা ও হাদিস বিশারদ।। ঠিক তেমনি রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন বটে। যুগের চাহিদা ও দাবি অনুযায়ী রাজনীতির ময়দানে, তালিমের অঙ্গনে, আমলি পরিবেশে সুচারুভাবে পরিচালনা করার জন্য তিনি ছিলেন অনন্য ও অসাধারণ ব্যক্তি। তার প্রজ্ঞা ছিল গভীর। তাঁর দ্বীনি খেদমতে উপকৃত হয়েছে দেশ ও জাতি।
জন্ম :
শিক্ষাজীবন :
মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহ. এর শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি শুরু হয় জামেয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায়।
শিক্ষকগণ :
মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহ. শিক্ষাজীবনে তৎকালীন সময়ের শীর্ষ স্থানীয় উলামায়ে কেরাম- এর কাছে অধ্যয়ন করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম— বিশিষ্ট আলেম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.,আলেম কুলের সম্রাট হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ., কিংবদন্তী মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ রহ. , শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আজিজুল হক রহ., আরেফ বিল্লাহ মাওলানা সালাহ উদ্দীন রহ. এবং হযরত মাওলানা আব্দুল মজীদ ঢাকুবী রহ.সহ পাকিস্তানের করাচী নিউ টাউন মাদরাসার শিক্ষক আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী রহ. এর কাছে হাদীস অধ্যয়ন করেন।
কর্মজীবন :
মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহ. এর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭০ সালে। প্রথমে মাদরাসা-ই- নূরিয়া কামরাঙ্গীরচরে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তিনি ঢাকার আলু বাজারে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। একই সাথে আলু বাজার মসজিদের খতীবের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৭৫ সালে তিনি জামেয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার শিক্ষক ও সহকারী মুফতী নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি লালবাগ জামেয়ার ভাইস প্রিন্সিপাল ও প্রধান মুফতীর দয়িত্ব পান। ১৯৮৭ সালে হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ.-এর ইন্তেকালের পর থেকে তিনি লালবাগ জামেয়ার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালে পান বড়কাটারা হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও মুতাওয়াল্লির দায়িত্ব। ইন্তেকালের আগ পর্যন্তই এই দুইটি মাদরাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পাশাপাশি ঢাকার কাকরাইল, দাউদকান্দির গৌরীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু মাদরাসার প্রধান অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে তিনি আশির দশকের শুরু পর্যন্ত তিনি ছিলেন অতি মনোযোগী ও নীরবতাবাদী একজন মেধাবী আলেম-শিক্ষক। শুধু কি তাই! এরপর তিনি
নব্বই দশকের শুরুতে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হিসেবে সরব একজন ইসলামী রাজনীতিক ছিলেন। তার কর্মের পরিচয় এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। গত দুই যুগ ধরে তিনি ছিলেন এদেশের ধর্মপ্রাণ-দেশপ্রেমিক মানুষ ও সর্বস্তরের আলেম সমাজের একজন প্রধান প্রতিনিধি।
আন্দোলন:
মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহ. নব্বই দশকের শুরুতে ভারতের উত্তর প্রদেশে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হলে এই দেশে লংমার্চের ডাক দেয়া হয়। সেই লংমার্চ আন্দোলনের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ও প্রধান নির্বাহী ছিলেন মুফতী আমিনী রাহ.।
১৯৯৪ সালে এক নাস্তিক মহিলা লেখিকা পবিত্র কুরআন পরিবর্তনের ডাক দিলে তিনি ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সারা দেশে ছুটে বেড়িয়ে আন্দোলন সংগঠিত করেন। হরতাল পালন করেন। সেই মুরতাদ মহিলা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়।
২০০১ সালে সব রকম ফতোয়া নিষিদ্ধ করার একটি রায় উচ্চ আদালত থেকে ঘোষিত হলে তিনি বিচারপতিকে মুরতাদ ঘোষণা করে ঝুঁকিপূর্ণ ও ঘটনাবহুল এক আন্দোলনে নেমে পড়েন।
২০১১ সালের ৪ এপ্রিল নারীনীতির মধ্যে উত্তরাধিকারসহ সবপর্যায়ে নারীর সম-অধিকারের কুরআনবিরোধী ধারা বাতিলের জন্য দেশব্যাপি সফল হরতাল পালন করেন।
এভাবে একের পর এক তিনি আন্দোলন ও সংগ্রাম করে গিয়েছেন। সারাদেশের শীর্ষ আলেমরা প্রতিটি আন্দোলনে তার সঙ্গে ও পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবাদ, আন্দোলন, সংগ্রামে ধর্মপ্রাণ মানুষের আস্থা ও আশ্বাসের মিনারে পরিণত হন তিনি।
মৃত্যু :
মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহ. ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে পরপারে পাড়ি জমান। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৭ বছর। বর্তমানে তাঁর দুই ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে।
এককথায়, মুফতী আমিনী রহ. একজন মেধাবী আলেম ও সংগ্রামী নেতা ছিলেন। তার হৃদয় ছিল উদার, চিন্তা-চেতনা ছিল বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন।যাঁর ধমনিতে প্রবাহিত হতো হকের চেতনা। মানবতা, সততা-নিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও নীতি পরায়নতা ছিল তার চরিত্রের অলংকার। যার ফলে তিনি দেশের আলেম সমাজের পাশাপাশি সাধারণ আমজনতার কাছেও ছিলেন ভালোবাসার পাত্র। আমরা আশাবাদী,
বাংলার সিংহ পুরুষ মুফতী আমিনী রহ. এর জীবন ও কর্মে রেখে যাওয়া নসিহত ও শিক্ষা আমাদের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনবে।
হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় মর্দে মুজাহিদকে তুমি শান্তির ছায়ায় টেনে নাও। জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করো। আমীন।
শিক্ষার্থী, বায়তুল মুমিন মাদ্রাসা, উত্তরা, ঢাকা।