বৃহস্পতিবার, ০৮ Jun ২০২৩, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন
দীর্ঘ ২০ মাস পর আজ উচ্চ আদালতের জামিনে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
২০২১ সালের ১২’ই এপ্রিল সন্ধ্যায় হাটহাজারী বালুচরা এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে পরদিন ২০১৩ সালের মতিঝিল থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে ২০১৩ ও ২০২১ সালের সর্বমোট ২৯ টি মামলায় শ্যোন-এরেস্ট দেখানো হয়। ২৯টি মামলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন মেয়াদে সর্বমোট ৫১ দিন রিমান্ডে ছিলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জেল ফেরৎ কয়েকজন রাজ বন্দীর বর্ণনামতে প্রায় ৫১ দিনের রিমান্ডে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর উপর দফায় দফায় লোমহর্ষক অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। ডিবির রিমান্ডে দুই হাতের পেছনে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে কালোকাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে সারাদিন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। লাঠি ও ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে নির্দয়ভাবে একাধিকবার মারধর করা হয়। প্রশাসনের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অশ্লীল ভাষায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহঃসহ হক্কানী আলেমসমাজ ও হেফাজত নেতৃবৃন্দকে গালিগালাজ করেছে। ডিবি কার্যালয়ের হাজতখানায় ১০*৮ ফিট একটা ছোট্ট কুটূরীতে ২৩ জনকে গাদাগাদি করে রেখেছে ইয়াবা,গাঁজা ও মাদকসেবীদদের সাথে।
মাওলানা ইসলামাবাদীকে রমনা থানায় রিমান্ডে ৩ দিন পর্যন্ত একবেলা খাবারও দেয়া হয়নি। বরঞ্চ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। শাহবাগ থানার রিমান্ডে যেই হাজতখানায় রাখা হয়েছে তা এতই নোংরা যে, কোনো মানুষ সেখানে থাকা তো দূরের কথা, দাঁড়াতেও পারবে না। হাজতের সামনে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। বৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে বিষাক্ত ময়লা পানি হাজতখানার ভেতরে ঢুকে যায়। তিনদিনের রিমান্ডে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী এই নোংরা পরিবেশে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
হাটহাজারী থানার মামলায় মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী চট্টগ্রাম ডিবি কার্যালয়ে ৬দিন রিমান্ডে ছিলেন। রাতদিন ২৪ ঘন্টা দুই হাত পেছনে হেন্ডকাফ লাগিয়ে চারজন স্বশস্ত্র পুলিশ প্রহরায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এক মূহূর্তের জন্য বসতে ও ঘুমাতে দেয়নি। এমনকি গোসল কিংবা জামাকাপড় পরিবর্তন করতেও দেয়া হয়নি। প্রথম দুইদিন নামাযের সময় হ্যান্ডকাফও খুলে দেয়নি। পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগও করতে দেয়নি। এই অমানবিক নির্যাতনের ফলে মাওলানা ইসলামাবাদীর দুই হাত ও দুই পা ফুলে যায়। কোমরে, হাঁটুতে ও হাতের বাহুতে প্রচণ্ড ব্যথায় কাঁতরাচ্ছিলেন। প্রেসার বেড়ে যাওয়ায় শরীরে প্রচণ্ড অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড মাথাব্যথায় ছটফট করলেও কোন ডাক্তার দেখায়নি এবং কোন ঔষধও দেয়নি। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ১৩ মাস পরিবারের কোনো সদস্য এবং আইনজীবির সাথে দেখা-সাক্ষাত ও কথাবার্তাও বলতে দেয়নি। পরিবার ও আইনজীবি ডিবি কার্যালয়ে দেখা করতে গেলে তাদেরকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম ডিবিতে রিমান্ড শেষে কারাগারে নেওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ৭ মাস কন্ডেম সেলে ২৪ ঘন্টা লকাপে রেখেছে। কোন আলো-বাতাস পায়নি।এক মুহুর্তের জন্যও রুম থেকে বাহির হওয়ার সুযোগ দেয়নি।
রিমান্ডে অবর্ণনীয় নির্যাতনের পর শীত ও ঠাণ্ডায় শরীরে নানা রোগের উপসর্গ সৃষ্টি হয়। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি যক্ষার মত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় চিকিৎসার জন্য জেল সুপারকে অবহিত করলেও তিনি জবাব দেন, আপনাদের ব্যাপারে উপরের নির্দেশ হলো শুধুমাত্র লাইফ সেইভ তথা জীবন রক্ষা করা। উন্নত চিকিৎসার কোনো সুযোগ নাই।
কারাভ্যন্তরে কিছু দলান্ধ কর্মকর্তা, সুবেদার-জমাদার ও কারারক্ষীরা আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ ইসলামপন্থী বন্দীদের সাথে এমন আচরণ ও দূর্ব্যবহার করে, যেন মনে হয় হেফাজতী ও ইসলামপন্থীরা ভিন্ন জগতের প্রাণী। কারাগারে সাক্ষাত করতে এলে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা সাক্ষাতপ্রার্থীদের ভোটার আইডিকার্ড সহ নানা তথ্য-উপাত্ত তলব করে হয়রানী করে। তথ্য-উপাত্ত দিতে না চাইলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং গ্রেফতারের হুমকি দেয়। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে আইনজীবিকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তি বা আত্মীয়-স্বজনকে নানাধরণের হুমকি ও হয়রানী করা হয়েছে।
এক কথায় বলতে গেলে সরকার হেফাজতের বন্দীদের শুধুই সবধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিতই করেনি বরং চুড়ান্ত পর্যায়ের মানবাধিকার লংঘন করে বন্দীদের আইনি অধিকার থেকে সম্পুর্ন বঞ্চিত করা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০ মাস কারাবন্দী থাকার পর নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে সর্বমোট ৩০টি মামলার জামিন নিয়ে আজ… বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন আপোষহীন সংগ্রামী জননেতা মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।