সোমবার, ০৫ Jun ২০২৩, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা চারটায়। বিকাল ৫টায় ভোট গণনা শুরু হয়েছে। সকল কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হওয়ায় খুব দ্রæত কেন্দ্রভিত্তিক ভোট গণনা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গাজীপুর বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামের রিটার্ণিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ফলাফল প্রকাশ গভীর রাত পর্যন্ত বিলম্বিত হয়। রাত ১১টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সর্বমোট ৪৮০ কেন্দ্রের মধ্যে রিটার্ণিং অফিস থেকে ১৩৩ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক বেসরকারি ফলাফল জানা গেছে। তার মধ্যে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি) প্রতীকে ৬৮,৮০০ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অ্যাড. আজমত উল্লা খান উক্ত কেন্দ্রগুলির ফলাফলে (নৌকা) প্রতীকে ৫৮,০২৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। তবে রিটার্ণিং অফিসে জমা পড়েছে এমন ৪২৬ কেন্দ্রের ফলাফলে মেয়র পদে জায়েদা খাতুন ’টেবিল ঘড়ি’ প্রতীকে ১,৮৭,৭০০ ভোট এবং অ্যাড. আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে ১,৭৪,৫০০ ভোট পেয়েছেন বলে জানা গেছে। সম্পূর্ণ ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে রাত আনুমানিক ৩টা বাজতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রার্থীদের ভোট প্রদান ও পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ:
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান সকাল ৯টার দিকে নিজ ওয়ার্ড ৫৭ নম্বরের টঙ্গী দারুস সালাম মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। ভোট দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের জয় নৌকারই হবে। গাজীপুরকে একটি দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গঠনে মানুষের যে প্রত্যয়, তা নৌকার জয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে।’ তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে যে ফলাফলই আসুক না কেন, তিনি সেটা মেনে নেবেন। জনগণের রায়ই তাঁর কাছে মূল বিষয়।
সকাল ১০টায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও জাহাঙ্গীর আলম সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন এবং তাঁর ছেলে ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তবে অনেক কেন্দ্রে টেবিল ঘড়ির কোন এজেন্ট না থাকার বিয়য়ে জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েকদিন আগে থেকেই পুলিশ ও আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা টেবিল ঘড়ির এজেন্টদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখান। অনেককে পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে গেছে।
জায়েদা খাতুনের নির্বাচন কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিকেল চারটা পর্যন্তই যেন ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হয়। কোনোভাবেই যেন সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইভিএম মেশিন টেম্পারিং করা না হয়।
কেন্দ্র থেকে হাতি প্রতীকের এজেন্টদের তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ:
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনির প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী মো. মাহবুবুর রহমান শাহীন রিটার্ণিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত এক অভিযোগে জানান, হাতি প্রতীকের পক্ষের পোলিং এজেন্টগণ স্ব স্ব কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে গেলে কেন্দ্রের বাহিরে নৌকা প্রতীকের ভ্যাজ ধারণ করে অবস্থানরত সরকার দলীয় লোকজন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে হাতি প্রতীকের এজেন্টদেরকে কেন্দ্র এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি বিভিন্ন কেন্দ্রের ভেতর দায়িত্বরত অবস্থায়ও হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্টদেরকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, পোড়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র নং ১৬৪, ওয়ার্ড নং-২৩) থেকে হাতি প্রতীকের নারী পুলিং এজেন্ট শ্রাবনীকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং চরম লাঞ্চিত (জুতা পেটা) করে কেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয় আওয়ামী লীগ দলীয় লোকজন। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪৬ নম্বর কেন্দ্র বিপ্রবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্ট হানিফকে, ১৫১ নম্বর কেন্দ্র জোলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্ট সাকিবকে এবং ১৫২ নম্বর কেন্দ্র মিরেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্ট আলী হোসেনকে মারধর, ভয় ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
বুথে প্রবেশ করে ভোটারের পরিবর্তে অন্য লোক মেয়রের ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ:
গাজীপুর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভাওরাইদ হাজী রোকন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোপন বুথে ঢুকে ভোটারের বদলে অন্য ব্যক্তিরা ইভিএমে বোতাম চেপে মেয়রের ভোট দিয়ে দিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছে সেখানকার তিনজন মহিলা ভোটার। অভিযোগকারি ভোটাররা হলেন, তসলিমা আক্তার, মোছা. বিলকিস ও শেফালী বেগম।