JuboKantho24 Logo

ইসলামি চিন্তায় প্রেম

আহসান জাইফ

প্রেম বিষয়ক প্রবন্ধ লেখার সবচে বড় সংকট হচ্ছে অন্যান্য বিষয়ের মতো একে কাঠামোবদ্ধ আকারে ব্যাখ্যা করা যায় না। বড় কথা হচ্ছে, প্রেম ব্যাখ্যা করার ব্যাপার নয়। সাহিত্যে আমরা প্রেমকে ব্যাখ্যা করার চেয়ে অনুভব ও তার নতুনত্ব খোঁজার চেষ্টাকে বেশি দেখতে পাই। নর–নারীর মধ্যকার এই রসায়ন একটি প্রাকৃতিক তাড়না, স্বভাবজাত।কিন্তু একে নিছক যৌনতা হিসেবে ব্যাখ্যার কিছু সংকট আছে। তার আগে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন বৈধ যৌনাচার একটি পবিত্র বিষয়, এর দ্বারা পৃথিবীতে প্রাণসঞ্চার হয়, প্রত্যেকেই আসে আল্লাহর খলিফা হওয়ার মহাগৌরব নিয়ে, প্রত্যেকেই এর মাধ্যমে আল্লাহর কালাম তথা আদেশ বহনের ভেতর দিয়ে রুহের সন্ধান পায়।

এখন নারী–পুরুষের এই যে পারস্পরিক টান, হাত ধরে বসে থাকবার আনন্দ, অপরের খেয়াল রাখতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা, অপরকে রাস্তাটা সাবধানে পার হতে বলার বোধ, একে নিতান্ত যৌনতার স্পিরিট বলার সংকট রয়েছে, আল্লাহ যখন বলছেন ‘লিতাসকুনু ইলাইহা’, এর দ্বারা মূলত মানবিক সুকুন তথা প্রশান্তিই মুখ্য উদ্দেশ্য। আল্লাহ অন্য আয়াতে যৌন উদ্দেশ্যকে ব্যক্ত করেছেন। আয়াতের শেষ অংশেও বলা হয়েছে তোমাদের পরস্পরের প্রতি দয়া ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। এইযে উল্লেখিত দয়া ও ভালোবাসা, সেটা তো আমরা আমাদের অন্যান্য পরিবারের লোকদের থেকেও পাই, তবু পরিবারের কাছে আমরা যেই কেয়ার আশা করি, সেটা ‘মাশুকা’র খেয়াল রাখার চেয়ে ভিন্ন। আমি বলছি না পরিবারের কেয়ারের বিষয়টি গৌণ,বলছি ‘মাশুকা’র কুশল জানতের চাওয়ার মুখোমুখি হওয়ার যে ব্যতিক্রম তীব্র সুখ, খানিক লজ্জা, সেটা অন্যান্য কুশলের চেয়ে ব্যতিক্রম অবশ্যই। তাহলে এ অনুভুতি আদতে কী? ফারসি ভাষার কবি যেমন বলছেন, বুলবুলিকেই তুমি একমাত্র জিজ্ঞেস করতে পারো গাছের ডালে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দানুভবের রহস্য!

প্রেম কিংবা ভালোবাসা মৌলিকভাবে কি বৈধ, নাকি নিন্দনীয় বিষয়? ইসলামি চিন্তায় এর কী অবস্থান? ট্রাডিশনাল ক্লাসিক স্কলাররা একে কীভাবে দেখতেন? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একটু আলাপ করা যাক।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও খুলাফায়ে রাশেদিনের সময়ে প্রেম সংক্রান্ত ঘটনাবলি

হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছেলের সাথে তার স্ত্রীর কোনো কারণে সংকট তৈরি হওয়ায় হজরত আবু বকর তাকে তালাক দেয়ার নির্দেশ দেন। অতঃপর আবদুল্লাহ বিন আবু বকর তাকে তালাক দেন। তালাক দেবার পর তার স্ত্রীর প্রতি তিনি গভীর টান ও ভালোবাসা অনুভব করেন এবং মানসিকভাবে বেচাইন ও অস্থির হয়ে পড়েন। এইভাবে এক সময়ে সেই বিচ্ছেদ সহ্য করতে না পেরে হজরত আবু বকরকে এই পরিস্থিতি জানান, যখন তিনি মসজিদে যাচ্ছিলেন, এবং বড় সুন্দর একটি কবিতার মাধ্যমে তিনি তাঁর বেদনা ব্যক্ত করেন। অতঃপর হজরত আবু বকর তাঁকে পুনরায় ফিরিয়ে নেয়ার অনুমতি দেন এবং একই সাথে পুত্রের ভালোবাসাকে সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করেন। [১]

এই যে হিকমাহ ও প্রজ্ঞা, তা একমাত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সুহবতের সুফল। ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ এই ঘটনা তাঁর কিতাবে যেই নামে অধ্যায় স্থাপন করে বলেন তা হচ্ছে আশিকের প্রতি দয়া ও তার প্রেমিকার নিকট সুপারিশ করা, যা শরিয়াহ বৈধ করেছে। ইবনুল কায়্যিম এই ঘটনাসহ খুলাফায়ে রাশেদিনের সময়ে ঘটিত এরকম আরও ঘটনা বর্ণনা করেন, অতঃপর বলেন, তাদের সময়ে ও এর পরে প্রেমিক\প্রেমিকার জন্য তার প্রেমিক\প্রেমিকাকে সুপারিশ করার প্রচলন ছিল, যেন সে এই ভালোবাসাকে গ্রহণ করে এবং এর বিচ্ছিন্ন সম্পর্কের একটি ইতিবাচক সমাপ্তি প্রদান করে। [২]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হিকে জনমসমক্ষে জিজ্ঞাসা করা হতো যে আপনার প্রিয়মানুষ কে? তিনি অকপটে বলতেন, আয়েশা! এইটাই হচ্ছে মৌলিকভাবে ভালোবাসা এবং নরনারীর মধ্যকার প্রেমের ‘মৌলিক’ রসায়নের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি। ইসলামের ক্লাসিক স্কলার ও ফুকাহায়ে কেরামের অবস্থানও ছিল তাই, তাঁরা মৌলিকভাবে প্রেম–ভালোবাসা সংক্রান্ত কথাবার্তা, কবিতা, স্মৃতিচারণে কোনো সমস্যা দেখতেন না। ইমাম হাফেজ মুগলতাই রহমতুল্লাহি আলায়হি বলেন, ‘ওলামায়ে কেরামের ইজমা–মতে ভালোবাসা কুরআনে কোনো অপছন্দনীয় বিষয় হিসেবে উল্লেখিত হয়নি, এবং তা শরিয়াহর নিষিদ্ধ বিষয়ও নয়। [৩]

ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলায়হি তাঁর সহিহতে ‘বারিদার স্বামীর পক্ষ থেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সুপারিশকরণ’ সংক্রান্ত অধ্যায় স্থাপন করেছেন। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, বারিদা নামক এক দাসী আজাদ হয়ে যান এবং এই সূত্রে তাঁর দাস–স্বামীর সাথে তিনি বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙে ফেলেন। বারিরার স্বামী মুগিস তাঁর স্ত্রীকে অকল্পনীয় রকম ভালবাসতেন, কিন্তু একই সাথে তাঁর স্ত্রী এখন তাঁর জন্য আজনবি, অন্য সাধারণ নারী! বর্ণিত আছে, মুগিস সেই বারিরার ভালোবাসায় মদিনার রাস্তায় রাস্তায় বারিরার পেছনে পেছনে ঘুরতেন এবং পুনরায় বিয়ের আকুল আহ্বান জানাতেন। এমনকি অশ্রুতে তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মুগিসের এই অবস্থা দেখে বারিরার কাছে যান, গিয়ে মুগিসের জন্য সুপারিশ করে বলেন, ‘তুমি মুগিসের কাছে ফিরে যাও, সে যে তোমার সন্তানের বাবা!’ বারিরা বলেন, ‘আপনি কি আমাকে আদেশ করছেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ?’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না না আমি তো সুপারিশ করছি কেবল!’ বারিরা উত্তর দেন, ‘আমার সুপারিশের প্রয়োজন নেই।’

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এরপর হজরত আব্বাসকে বলতেন, ‘হে আব্বাস, তোমাকে অবাক করে না যে মুগিস বারিরাকে কত ভালবাসে এবং বারিরা মুগিসকে কত অপছন্দ করে!’ [৪]

ইমাম ইবনে বাত্তাল এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘কোনো মুসলিমের জন্য মুসলিম নারীকে ভালোবাসাতে কোনো দোষ নেই, চাই তা গোপন করুক অথবা প্রকাশ করুক।’ [৫] ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহমতুল্লাহি আলায়হি বলেন, ‘এই যে সুপারিশ, তা হচ্ছে সকল সুপারিশকারীর নেতার পক্ষ হতে একজন আশেকের হয়ে তার মাহবুবের জন্য, এবং তা আল্লাহর নিকট উত্তম ও শ্রেষ্ঠ সুপারিশ। তা হচ্ছে দুই যুগলের মাঝে মিলন ঘটানো, যা আল্লাহ ও তার রাসুল ভালোবাসেন। সুতরাং তা আমার নিকট অতি উত্তম, ওই বিচ্ছেদের চাইতে যা ইবলিস ও তার দলবলের নিকট কাম্য। [৬] অপর হাদিসে এসেছে, এমন এক নারীর বিয়ে হলো, যে অন্য কাউকে ভালোবাসত, চাপের মুখে সে বিয়ে করতে বাধ্য হয় অন্য কাউকে, অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার বিয়ে ভেঙে দিয়ে সে যাকে ভালবাসে তার সাথে বিয়ে করিয়ে দেন। [৭]

ফকিহদের আলোচনায় ভালোবাসা চিন্তার উপস্থিতি

অনেকে ধারণা করেন, মৌলিকভাবে ভালোবাসার ব্যাপারে আলাপ, কবিতা সংগীত ও ভাব প্রকাশ নিষিদ্ধ। অথচ ফুকাহায়ে কেরামের বিভিন্ন বইয়ে এ ব্যাপারে আলোচনা পাওয়া যায়। এমনকি অনেকে এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করেছেন (এ আলোচনা সামনে আসবে)। উপরে আমরা বিভিন্ন আলেমের নজরিয়ায় মৌলিকভাবে প্রেম–ভালোবাসার অবস্থান কী তা স্পষ্ট করেছি। এখন এই ব্যাপারে আলেমদের লেখাজোকা ও বিভিন্ন কওল আমরা দেখব। বিভিন্ন তাফসিরের কিতাব, হাদিসের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ এবং সুফিয়ায়ে কেরামের ওই সকল কিতাব যাতে আল্লাহকে ভালোবাসার প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু আকারে মানবীয় প্রেমের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়াও বিচ্ছেদ–সম্পর্কিত মানসিক চিকিৎসাপদ্ধতি, এই মানবীয় অনুভূতির সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ এবং একই সাথে প্রেম–ভালোবাসার সাইকোলজিক্যাল বিশ্লেষণও ক্লাসিক স্কলাররা লিখে গেছেন। তন্মধ্যে ইবনুল কায়্যিমের রওজাতুল মুহিব্বিন, ইবনুল জাওযির জাম্মুল হাওয়া, গাজালির ইহইয়া ইলমুদ্দিন অন্যতম।

ফুকাহায়ে কেরাম বিশুদ্ধ মৌলিক প্রেম–ভালোবাসাকে এমন নিষিদ্ধ বিষয় আকারে দেখেননি, যা থেকে একজন লোককে পবিত্র থাকতে হবে। বরং তারা একে মানুষের স্বভাবজাত বিষয় হিসেবে দেখেছেন, যতক্ষণ না তা নিছক মৌলিকতা ছাড়িয়ে এমন নিষিদ্ধ বিষয়ের দিকে নিয়ে যায় যার নিষিদ্ধতায় সরাসরি নস রয়েছে। কেউ যদি ভাবেন যে, তবে তো ‘ফ্রি মিক্সিং’ ব্যপারটা বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে, তাহলে এই ভাবনাকে বলা উচিত খুবই বাজে একটা প্রাক্টিস। মৌলিকভাবে কারও প্রতি ভালোবাসা জন্মানো আসলান মুবাহ। এবং তার একটি বৈধ পরিণতির জন্য চেষ্টা–প্রচেষ্টা করা উত্তম কাজ, এমনকি অন্য কেউ তাদের পক্ষ হয়ে সুপারিশ করা সুন্নাহ, যেমনটা ইবনুল কায়্যিম তাঁর রওজাতুল মুহিব্বিন গ্রন্থে বলেছেন। তবে খালওয়াত তথা একান্ত নির্জনবাস, যে অবস্থায় তৃতীয় কারও উপস্থিতির সুযোগ থাকে না, তা বহু হাদিস দ্বারা হারাম প্রমাণিত। এ ছাড়া এমন কাজ যা ব্যভিচারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তাও হারাম। এখানেই মৌলিক প্রেম আর তার কিছু সক্রিয়তার হারাম হওয়ার ফারাক।

অনেকে এ ক্ষেত্রে বলেন, প্রেমের বিয়েতে বরকত ও রহমত থাকে না। সংসার টেকে না। অভিজ্ঞতালব্ধ মন্তব্য হলে, তা খুবই একপেশে ও কখনো কখনো হীনমন্য বক্তব্য। শরয়ি দিক থেকে মন্তব্য হলে, এর সমর্থনে কুরআন ও সুন্নাহর কোনো দলিল নেই। যদি বলা হয় যেই সম্পর্কের সূচনাই হচ্ছে হারাম, তাতে রহমত থাকে না, তো এর জবাবে প্রথম কথা হলো, এই সিদ্ধান্তগত পরিণতির কোনো নির্দিষ্ট উসুলি ও যুক্তিগত প্রমাণ নেই। দ্বিতীয়ত সম্পর্ক বলতে যদি মৌলিক ভালোবাসাকে বোঝানো হয়, তাহলে জেনে রাখতে হবে মৌলিক ভালোবাসা কিংবা প্রেম হারাম নয়। আর যদি হারাম সক্রিয়তা ও অবস্থানকে বোঝানো হয়, তবে সকল হারামই জিনার ওসিলা হিসেবে হারাম, জিনা হচ্ছে নিষিদ্ধকরণের মূল মাকসাদ। যখন বিয়ের মাধ্যমে নিষিদ্ধতার মূল মাকসাদই সরে যাবে, তখন ওয়াসায়েল কী করে তাতে প্রভাব রাখতে পারে? তাছাড়া যেসকল হারাম কাজ সংঘটিত হয়েছে, তার জন্য তওবা ও বিয়ের মতো ধর্মীয়ভাবে বরকতপূর্ণ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। আর আল্লাহ বলছেন তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।

ভালোবাসা বিষয়ক আলেমেদের লেখা কিছু অনবদ্য গ্রন্থ

তওকুল হামামা। লিখেছেন ইবনু হাজম আন্দালুসি রহমতুল্লাহি আলায়হি। ইবনু হাজম আন্দালুসি ছিলেন জাহিরি ফিকহের এক অন্যতম পুরোধা পুরুষ। জাহিরি ফিকহের বিখ্যাত কিতাব আল–মুহাল্লার রচয়িতা, একই সাথে ফকিহ, দার্শনিক, ভাষাবিদ ও চিন্তার জগতে একজন বিশাল মাপের মানুষ। উক্ত বইয়ে তিনি প্রেম–ভালোবাসা সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা, কবিতা ও প্রেমিকদের বিভিন্ন অবস্থা বর্ণনা করেছেন। একই সাথে প্রেমের সাইকোলজিক্যাল ব্যখ্যা, দার্শনিক আলাপে প্রেম–ভালোবাসা সংক্রান্ত অনুভূতির গভীরে যেতে চেষ্টা করেছেন। এই কিতাব তিনি অনেক ছোট ছোট অধ্যায়ে ভাগ করেছেন। যেমন ‘যে প্রথম দৃষ্টিতে প্রেমে পড়ল’ (যদিও তিনি প্রথম তাকানোয় প্রেমে পড়া টাইপ ব্যাপারে বিশ্বাস করেন না, একে তিনি নিখাদ জৈবিক তাড়না বলেছেন।), ‘যে স্বপ্নে দেখা কাউকে দেখে প্রেমে পড়ল’ ইত্যাদি। এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট বাস্তব ঘটনাও যুক্ত করেছেন। বইটি ভাষাগত দিক দিয়ে বেশ উচ্চ মানের।

রওজাতুল মুহিব্বিন ওয়া নুযহাতুল মুশতাকিন। লিখেছেন ইবনুল কায়্যিম জাওজিয়াহ রহমতুল্লাহি আলায়হি। এ এমন এক কিতাব, যার সুখ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। লেখক ইবনুল কাইয়িম হাম্বলি মাজহাবের ফকিহ, অষ্টম হিজরি শতাব্দীর আলেম, ইবনে তাইমিয়ার বিশেষ শিষ্য এবং ইবনে তাইমিয়ার মতো আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ’ চিন্তাধারার কারণে জনপ্রিয়। ফিকহ, সিরাত ও আকিদা বিষয়ে তাঁর অসংখ্য বই রয়েছে। রওজাতুল মুহিব্বিন ভালোবাসা ও প্রেমের ক্ষেত্রে ইসলামি চিন্তাঘরানায় লেখা সবচে বিখ্যাত ও সামগ্রিক বই। এবং হাদিস ও আসার দ্বারা এসকল বিষয়কে বোঝাবুঝির ক্ষেত্রে সবচে সেরা বই।ইশকের ক্ষেত্রে তার সঠিক উপায়, বাতিল উপায়, কারণ, পরিণতি, হাদিস, ফিকহি মাসায়েল, সালাফদের উক্তি এবং বিভিন্ন কবিতা তাতে তিনি সংযুক্ত করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে ইশকে বিচ্ছেদের পর কীভাবে সেই কষ্ট ও অসুখ সারিয়ে নেয়া যেতে পারে তা নিয়েও আলাপ করেছেন।

ভালোবাসা ও প্রেম সাহাবায়ে কেরাম, এমনকি খোদ রাসুলের সময়ও ছিল। এই বিষয়কে তাঁরা কোনো নিকৃষ্ট বিষয় হিসেবে দেখতেন না। ইশকে আক্রান্ত কাউকে তাঁরা ঘৃণা করতেন না, বরং তার প্রতি দয়া ও সহমর্মিতা প্রকাশ করতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম খোদ একজন প্রেমিকের জন্য তার ভালোবাসার মানুষের কাছে বিয়ে করার সুপারিশ করেছেন, এবং ফুকাহায়ে কেরাম একে রাসুলের সুন্নাহ বলেছেন। ইসলামি চিন্তার ইতিহাসে ফুকাহায়ে কেরাম এ বিষয় নিয়ে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন, এবং এ বিষয়কে দীন, দুনিয়া, ইন্দ্রিয়ানুভুতি দিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। একই সাথে বিশুদ্ধ ও মৌলিক ভালোবাসা সম্পর্কিত বিভিন্ন গল্প ঘটনা ও কবিতা লিখেছেন। তবে আজ আমরা কেন পাশ্চাত্যের ভোগবাদী চিন্তার উপস্থাপনকৃত সম্পর্কের রসায়নের বাইরে চিন্তা করতে পারছি না? এবং তাকে কেন আমাদের তুরাসি (ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী চিন্তা) চিন্তার আলোকে বুঝতে পারছি না?

টীকা

১. শরহু আবইয়াতি মুগনিল লাবিব। ২. রওজাতুল মুহিব্বিন। ৩. সহিহ বুখারি। ৪. আল ওয়াদিহুল মুবিন জিকরি মান উসতুশহিদা মিনাল মুহিব্বিন। ৫. সহিহ বুখারি। ৬. সহিহ বুখারি লি ইবনি বাত্তাল। ৭. রওজাতুল মুহিব্বিন। ৮. সহিহ বুখারি।

লেখক : তরুণ একটিভিস্ট

Jubokantho24 Ad
এ জাতীয় আরো সংবাদ
এ জাতীয় আরো সংবাদ