চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনা সংঘের (ইসকন) নেতা ও সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভু ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার ও তার জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
সনাতনী সমাজ চট্টগ্রাম আদালত ভবনে চিন্ময় প্রভুকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান দুই ঘন্টারও বেশি সময় আটকে রেখে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের সরাতে গেলে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ার সেল নিক্ষেপ, ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও লাঠি চার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবিও।
সংঘর্ষ চলাকালে আদালত ভবন চত্বর, জেলা পরিষদ মার্কেট, কোতোয়ালী, টেরিবাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় বেশ কিছু যানবাহন ভাংচুর করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে সাইফুল ইসলাম নামে এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯ জনকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এবং ৮ জনকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে সন্ধ্যা ছয়টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় নিউ মার্কেট চত্বরে কিছু সমন্বয়য়কের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা ও সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন পাল্টাপাল্টি অবস্থন নেয়। মাঝখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নিয়ে দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। বিরাজ করে থমথমে পরিস্থিতি।
সোমবার রাতে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। এর প্রতিবাদে ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও সনাতনী সম্প্রদায় বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল বের করে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় চিন্ময় প্রভুকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়। ১১টা ৭ মিনিটের দিকে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আদালত প্রাঙ্গন জুড়ে পুলিশসহ যৌথবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তাবলয় ছিল। বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (৬ষ্ঠ) কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় কয়েকজন আইনজীবীকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আদালতে তার জামিন শুনানি শুরু করেন। আদালতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সনাতনী সম্প্রদায়ের কয়েকশ আইনজীবী আদালতের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান করেন। আদালত আবেদনের শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্ময় কৃষ্ণকে কারাগারে ডিভিশন ও ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের সুযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
আসামী পক্ষের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আদালত চিন্ময় প্রভুর জামিন নামঞ্জুর করেছেন। উনাকে কারাগারে ডিভিশন সুবিধা দেওয়ার জন্য আদালত আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া আমাদের আরেকটা আবেদন ছিল। উনি যেহেতু নিরামিষভোজী ও শাকাহারি, উনাকে যেন ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়। আদালত সেটা মঞ্জুর করে কারা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।