হেফাজত কোথায় নিরাপদ? মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আমিন

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের দীর্ঘ ১৬ বছরের পথচলা ছিল হাটহাজারী মাদরাসাকেন্দ্রিক। কিন্তু বাস্তবে সেটি মোটেও নিরাপদ ছিল না। ভেতরের নানা টানাপোড়েন, বিভাজন ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রভাবের কারণে সংগঠনকে বারবার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। মুফতি ফয়জুল্লাহ, রুহী, আলতাফ ও আনাস মাদানী প্রমুখদের দ্বন্দ্ব এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এসেছে।

অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে হেফাজত এখন তুলনামূলকভাবে অনেকটা নিরাপদ অবস্থানে আছে বলে অনেকের ধারণা। দুই-একজনের বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ডকে বড় করে দেখা ঠিক হবে না। বরং সামগ্রিক নেতৃত্বের শক্তি ও দায়িত্বশীল ভূমিকা সংগঠনকে এগিয়ে নিচ্ছে।

রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়া কেন জরুরি?

একটি সংগঠন যখন জাতীয়ভাবে ধর্মীয় নেতৃত্ব দেয়, তখন সেটির কেন্দ্রীয় অবস্থান রাজধানীতেই থাকা সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ও কার্যকর। এখান থেকেই দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা, যোগাযোগ রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় স্তরে অংশগ্রহণ সহজ হয়। বিষয়টি বুঝতে গভীর গবেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং এটি একটি বাস্তবতা।

জুলাই বিপ্লবে হেফাজতের ভূমিকা

জুলাই বিপ্লবে হেফাজতের নেতাকর্মীরা রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে। সেই আত্মত্যাগের প্রেক্ষাপটেই জুলাই-পরবর্তী সময়ে ইউনুস সরকার দেশের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছেন। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক—সব সংগঠনের সাথেই তিনি বসেছেন। সেই হিসেবে হেফাজতের মহাসচিবের অংশগ্রহণও ছিল যথাযথ ও যৌক্তিক।

কেউ যদি বলে—”রক্ত দেবো, জীবন দেবো, কিন্তু অধিকার চাইবো না”—তাহলে সেটি হবে বৈষম্য ও দেউলিয়াত্বের পরিচয়। কথায় আছে: “মজা মারে ফজা ভাই, আমরা সবাই বৈঠা বাই!” অধিকার কেউ কাউকে স্বেচ্ছায় বুঝিয়ে দেয় না, অধিকার আদায় করতে হয়।

তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা

কওমি তরুণ ও যুবকদের মতে, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জবান থেকে এমন বক্তব্য আসা উচিত নয় যা তাদেরকে আবারও পিছিয়ে নিয়ে যায়। তারা মনে করে, গত ৫৪ বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলো কওমি আলেম-উলামাদের ব্যবহার করেছে, কিন্তু প্রাপ্য সম্মান বা অধিকার দেয়নি। এখন সময় এসেছে সেই অধিকার আদায়ের জন্য দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবার।

উপসংহার

হেফাজত কোথায় নিরাপদ—এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট। রাজধানীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তই সংগঠনকে নিরাপদ ও শক্তিশালী করতে পারে। অতীতের দ্বন্দ্ব থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়িত্বশীলতার বার্তা পৌঁছানোই এখন সময়ের দাবি।

Jubokantho24 Ad
এ জাতীয় আরো সংবাদ
এ জাতীয় আরো সংবাদ
সর্বশেষ
সর্বশেষ