
বাংলাদেশের প্রাচীনতম ইসলামি রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তারা জমিয়তের ঐতিহ্য, আদর্শ ও বর্তমান ভূমিকার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এবং হক ও বাতিলের মাঝে সুস্পষ্ট ফারাক বজায় রাখার আহ্বান জানান।
আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন,
“আগামী নির্বাচনে এমন দলের সাথে জোট করার চিন্তা করবেন না, যার ব্যাপারে আমাদের পূর্বপুরুষগণ সতর্ক করে গেছেন।”
আল্লামা আলিম উদ্দিন দুর্লভপুরী হাফি. বলেন,
“ইসমতে আম্বিয়া, আদালতে সাহাবা যাদের মানতে কষ্ট হয়, তারা কোনোভাবেই ইসলামি দল হতে পারে না।”
মাওলানা মুসা আল হাফিজ বলেন,
“বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম যে ভূমিকা পালন করছে, আমি মনে করি উসূলে দ্বীন অনুযায়ী এটা যথার্থ।”
মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী বলেন,
“জমিয়ত শত বছর ধরে হক হক্কানিয়তের পতাকাবাহী হয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে।”
মাওলানা খুবায়েব আহমদ, মুহতামিম – জিরি মাদরাসা, চট্টগ্রাম বলেন,
“আমরা দেওবন্দিয়তের শব্দ বুঝি; অর্থ বুঝি না। দেওবন্দিয়ত তো জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।”
মাওলানা আশরাফ আলী নেজামপুরী, মুহাদ্দিস – হাটহাজারী মাদরাসা বলেন,
“আমার বয়স ষাটের কাছাকাছি। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আমার সম্পৃতা নেই। যদি রাজনীতি করতাম, তাহলে জমিয়তই করতাম।”
বিশিষ্ট লেখক, গবেষক মাওলানা যাইনুল আবেদীন বলেন,
১. “জমিয়ত প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রমাণ করে আসছে, জমিয়ত ওলামায়ে দেওবন্দের সঠিক প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন।”
২. “কিছু অতি লোভী ও স্বার্থ আদায়ের আগ্রাসী মানুষ ইসলামী ঐক্যের নামে হক ও বাতিলকে মিশিয়ে ফেলতে চাচ্ছেন।”
৩. “এ দেশের মুসলমানদের রাজনৈতিক শত্রুও আছে, ধর্মীয় শত্রুও আছে। একান্ত প্রয়োজন হলে বৃহৎ স্বার্থে রাজনৈতিক শত্রুর সাথে ঐক্য হতে পারে, কিন্তু ধর্মীয় শত্রুর সাথে কখনো ঐক্য হতে পারে না।”
মুনাজিরে ইসলাম আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী দা.বা. বলেন,
“যাদের আকিদা শুদ্ধ নয়, আমল ঠিক নয়, আখলাক ভালো নয়– তাদের সাথে কখনো ঐক্য হতে পারে না। আর যারা বলে আমরা শরীয়া আইনে বিশ্বাস করি না, তাদের সাথে ধর্মীয় ঐক্য হতে পারে না; তবে দেশরক্ষার ঐক্য করা যায় কিনা এটা ভেবে দেখার বিষয়।”
আল্লামা আবু তাহের নদভী কাসেমী, মহাপরিচালক – পটিয়া মাদরাসা বলেন,
“জমিয়ত আমাদের আকাবেরদের সংগঠন। জমিয়তের এই সম্মেলনে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই– হকের সাথে বাতেলের কোনো ঐক্য হতে পারে না।”
মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, নায়েবে আমীর – খেলাফত মজলিস বলেন,
“বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে এবং এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম যে অবদান রেখেছে, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এখনও মানুষের ঈমান আকীদার হেফাজত এবং দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জমিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।”
মাওলানা সাজিদুর রহমান, হেফাজত মহাসচিব বলেন,
“ইত্তেহাদ বাইনানা না করে আমরা ইত্তেহাদ মা’আ গাইরিনার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছি।”
আল্লামা খলীল আহমদ কুরাইশী কাসেমী দা.বা., মহাপরিচালক – হাটহাজারী মাদরাসা বলেন,
১. “আমাদের ঘরে ঘরে কালসাপ ঢুকে যাচ্ছে। জমিয়ত আমাদের নজরিয়ার হেফাজতের জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছে, আমি এতে মুকম্মল সমর্থন জানাচ্ছি।”
২. “আমীরে হেফজতের বক্তব্য আমরা সবসময় স্মরণ রাখবো।”
৩. “জমিয়তের সাথে থাকলে আমাদের ঈমান আকীদার হেফাজত হবে ইনশাআল্লাহ।”
সম্মেলনে অংশ নেওয়া বক্তারা একবাক্যে বলেন– জমিয়তের ঐতিহ্য সংরক্ষণ, হক ও বাতিলের পার্থক্য বজায় রাখা এবং মুসলিম উম্মাহর ঈমান-আকীদা রক্ষার আন্দোলনে জমিয়তই হলো সবচেয়ে প্রামাণিক ও নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম।