পূজা, রাজনীতি ও মুসলিম নেতৃত্ব : আমাদের অবস্থান কী হওয়া উচিত?

বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম, অথচ সমাজ-রাজনীতির অঙ্গনে প্রায়ই দেখা যায় ভিন্ন এক চিত্র। মূর্তি পূজার অনুষ্ঠানকে ঘিরে মুসলিম সমাজ ও বিশেষ করে ইসলামী রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মীর বাড়তি আগ্রহ আমাদেরকে ভাবনায় ফেলে দেয়। প্রশ্ন জাগে—আপনাদের কাছে ভোটের হিসাব বড়, নাকি ঈমান বড়?

অকারণ শুভেচ্ছা নাকি ঈমানের ক্ষতি?

একজন মুসলিমের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের অধিকারকে সম্মান করা, তাদের ক্ষতি না করা এবং কোনোভাবে বিরক্ত না করা। এটাই প্রকৃত সহাবস্থান। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা মুশরিকদের পূজা উদযাপনকে সমর্থন জানাবো বা শিরকপূর্ণ কথাবার্তা বলবো।
কোনো হিন্দু নাগরিক তাদের পূজা করছে—তাতে মুসলিমের করণীয় হলো শান্তি বজায় রাখা, নিরাপত্তা বিঘ্ন না করা। কিন্তু তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রশংসা করা বা “শুভেচ্ছা বার্তা” দেওয়া ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। বরং এসব আচরণে মুসলিমদের ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

সেনাবাহিনী, রাজনীতি ও পূজা মণ্ডপ

জুলাই বিপ্লবের পর সেনাবাহিনী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ডেকেছেন। সাধারণ মানুষ ভেবেছিল—দেশের আইনশৃঙ্খলা, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার , কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজি রংবাজি, কিংবা মাদকের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলা নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো একটাই—পূজা মণ্ডপকে কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়!

সর্বশেষ উদাহরণ হলো ঢাকা-১৮ আসনের এমপি পদপ্রার্থীদের বৈঠক। সেখানেও আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল পূজা মণ্ডপ পাহারাদারি। প্রশ্ন জাগে, মণ্ডপ পাহারার দায়িত্ব কি রাজনৈতিক দলের, নাকি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর? সেনাবাহিনী যখনই ডাকছে, তখনই কেন আলোচনার বিষয় হয় পূজা মণ্ডপ? ইসলামি দলগুলোর কাছ থেকে কি তারা কেবল পূজা পাহারা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিই প্রত্যাশা করে?

মুসলিমদের দায়িত্ব আসলে কী?

মুসলিম সমাজের দায়িত্ব স্পষ্ট,
মসজিদ-মাদরাসায় আলোচনা করে মানুষকে সচেতন করা,ইসলামি চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা,সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা,সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানুষকে ন্যায় ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেওয়া।

এটাই হলো ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু পূজা মণ্ডপে গিয়ে পূজার ফজিলত বয়ান করা, তাদের পূজাকে মহিমান্বিত করে দেখানো—এটা কোনোভাবেই মুসলিম নেতৃত্বের দায়িত্ব নয়। বরং এতে মুসলিমদের ঈমান ঝুঁকিতে পড়ে।

ভোট, রাজনীতি নাকি ঈমান?

আজকের বাস্তবতায় মুসলিম নেতৃত্ব এক বড় দ্বিধায় আছে। একদিকে ভোটের রাজনীতি, অন্যদিকে ঈমানের প্রশ্ন। অনেক নেতা জনগণের মন পাওয়ার আশায় পূজা মণ্ডপে গিয়ে উপস্থিত হন, শুভেচ্ছা জানান, এমনকি পূজা নিয়ে বক্তব্য দেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে—ভোট সাময়িক, অথচ ঈমান চিরস্থায়ী। একজন মুসলিমের জন্য ঈমানের বিনিময়ে সাময়িক রাজনৈতিক লাভ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ইসলামী অবস্থান
ইসলামের শিক্ষা হলো—কাউকে অযথা কষ্ট দেওয়া যাবে না,অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় ভাঙচুর করা যাবে না,কিন্তু শিরকপূর্ণ কাজকে প্রশংসা করা যাবে না,

শুভেচ্ছা জানানো যাবে না,বরং তাদের সাথে ন্যায়, শান্তি ও সদ্ব্যবহার করতে হবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম কখনো কোনো মুশরিক উৎসবে অংশ নেননি বা তাদের প্রশংসা করেননি। বরং সর্বদা তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন।

এখন সময় এসেছে মুসলিম সমাজ ও নেতৃত্বের আত্মসমালোচনা করার। আমরা কি ভোট ও রাজনীতির চাপে ঈমানকে বিসর্জন দিচ্ছি? আমরা কি ইসলামের মূলনীতি ভুলে যাচ্ছি?

সত্যিকারের সহাবস্থান হলো—তাদের ক্ষতি না করা, নিরাপত্তায় সহযোগিতা করা এবং শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা। কিন্তু তাদের পূজা-পার্বণে অংশগ্রহণ করা বা প্রশংসা করা ইসলামী দৃষ্টিতে সঠিক নয়। মুসলিম নেতৃত্বকে অবশ্যই বুঝতে হবে—ঈমানের তুলনায় ভোট কখনোই বড় নয়।

মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আমিন
সম্পাদক মাসিক যুবকণ্ঠ ও যুবকণ্ঠ টুয়েন্টিফোর ডটকম, সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস ঢাকা মহানগর উত্তর।

Jubokantho24 Ad
এ জাতীয় আরো সংবাদ
এ জাতীয় আরো সংবাদ
সর্বশেষ
সর্বশেষ