
গাজীপুরের খতিব মুহিবুল্লাহ মিয়াজির কথিত অপহরণ ও স্ববিরোধী স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি নিয়ে আমরা অনুসন্ধান চালিয়েছি। আমরা কেন এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি, বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করছি-
আমরা মূলত দুটি সম্ভাবনার আশঙ্কা মাথায় নিয়ে অনুসন্ধান চালানো প্রয়োজন মনে করেছি।
একটি সম্ভাবনা হলো-
বাস্তবিকই খতিব অপহরণ হয়েছেন।
সে ক্ষেত্রে দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করতে গিয়ে একজন খতিব অপহরণ হওয়ার বিষয়টি কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার মত থাকেনা। বিষয়টিতে আলেম সমাজের পক্ষ থেকে শক্ত প্রতিবাদ ও জোরালো পদক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে। তেমন উদ্যোগের তাগিদ থেকেই আমরা এই অভিযানে নামি।
দ্বিতীয় আশংকা হল-
প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার জন্য পুলিশ তাকে চাপ দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছে।
এমনটি হয়ে থাকলেও আলেম সমাজের উপর তাকে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব বর্তায় এবং একজন আলেমকে এহেন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা আমাদের জন্য জরুরী হয়ে পড়ে।
এই শংকাগুলোকে মাথায় রেখে আমরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করি। সেই সাথে মিয়াজির অসুস্থতার বিষয়টিও সামনে আসতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের একটি টিম দ্রুত মিয়াজির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করে। তারপর তার ভালো ও নিরাপদ চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর একটি উন্নত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সার্বিক পরিচর্যা, সব ধরনের ডাক্তারি পরীক্ষা-পরীক্ষাসহ তার পূর্ণাঙ্গ ট্রিটমেন্টের আয়োজন করা হয়।
যেহেতু আমাদের মাথায় এমন দুশ্চিন্তা ছিল যে, পুলিশ বলপ্রয়োগ করে তার কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। সে ক্ষেত্রে তাকে পুলিশের কাছ থেকে নিরাপদে রেখে চিকিৎসা করানো ও সত্য উদঘাটন করার জন্য তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হয়েছে। এভাবে একটি উন্নত হাসপাতালে এক সপ্তাহ যাবৎ একজন রোগীর এটেনডেন্ট সহ যাবতীয় আয়োজন করা কতটা ব্যয়বহুল, সচেতন ব্যক্তি মাত্রই তা অনুমান করতে পারে। আমরা এই কাজগুলো আলহামদুলিল্লাহ করেছি।
হাসপাতালে তার ছেলেসহ তিনি আমাদের টিমের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকেন।
ইত্যবসরে তার সাথে, তার ছেলের সাথে, ডাক্তারদের সাথে ও সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আমাদের টিম স্ববিস্তারে আলোচনা করে ও তথ্য অনুসন্ধান চালায় এবং ক্রসচেক করে।
অনুসন্ধানে যাবতীয় তথ্য ও ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফল ও ডাক্তারদের মতামত সবকিছু মিলিয়ে আমরা আমাদের প্রধান দুটি শংকার বিষয়ে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে,
এক) খতিব মুহিবুল্লাহ মিয়াজিকে অপহরণ করা হয়নি।
দুই) পুলিশ কর্তৃক তার কাছ থেকে বলপ্রয়োগপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার বিষয়টিও সাব্যস্ত হয়নি। এ বিষয়ে যারা জোরালো বক্তব্য দিয়েছিল, তাদের সাথেও আমরা কথা বলেছি। কিন্তু তা দ্বারা আমাদের আশংকার স্বপক্ষে প্রমাণ পাইনি।
সারকথা, আমরা দীর্ঘ কষ্টসাধ্য পরিশ্রমী ও ব্যয়বহুল এ কার্যক্রমটি মূলত যেই দুটি শংকার কথা মাথায় রেখে পরিচালনা করেছি, সেগুলোর স্বপক্ষে প্রমাণ আমরা খুঁজে পাইনি।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে
প্রকৃত ঘটনা কী?
কিভাবে তিনি পঞ্চগড় গেলেন?
তিনি নিখোঁজ হওয়ার পূর্বের হুমকি প্রদানমূলক চিঠিগুলোর সাথে তার অন্তর্ধানের যোগসূত্রিতাই বা কী?
এ বিষয়গুলো আমরা উদঘাটন করতে পারিনি। আমরা মনে করি এগুলো প্রশাসনের দায়িত্ব৷
এ পর্যায়ে এসে অনেকে এ প্রশ্ন করেন যে, এমন একটি অসম্পূর্ণ অনুসন্ধান চালানো এবং তার প্রতিবেদন প্রকাশ করার কি প্রয়োজন ছিল?
আমরা মনে করি গাজীপুরের ঘটনায় আমাদের যারা প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের এই ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে প্রকৃত এমন কোন ঘটনা ঘটলেও গাজীপুরের ঘটনার উদ্ধৃতিতে তা অবাস্তব প্রমাণ করার চেষ্টা হতে পারে। তাই আমরা এক্ষেত্রে আমাদের অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত সত্যকে প্রকাশ করে দিলাম। যেন বিব্রতকর হলেও সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে কেউ করতে না পারে।
এটিকে আমরা নৈতিক দায়িত্বও মনে করেছি।
সেই সাথে অতি উৎসাহী ব্যক্তিবর্গকেও সঠিক প্রমাণ ব্যতিরেকে কোন হঠকারী কার্যকলাপ থেকে সতর্ক করা হলো।




