JuboKantho24 Logo

ছুটি উদযাপন শিক্ষার্থীদের পদস্খলনের ভয়

মিযানুর রহমান জামীল

ছাত্রজীবনে ছুটি উদযাপন দোষের কিছু নয়; তবে ছুটি যেন স্টুডেন্ট লাইফকে ওলটপালট করে না দেয় সেদিকে রাখতে হবে সজাক দৃষ্টি। অতি আনন্দে আত্মপরিচয় ভুলে ছুটির অপব্যবহার— সময়ের গলায় চাকু চালানোর চেয়েও ভয়াবহ। ছুটি যেন আমাদের হায়াতে-ইলমির পতনকে তরান্বিত না করে সে জন্য আছে বড়দের সতর্কবার্তা।
মুফাক্কিরে ইসলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেছেন— ‘তালিবুল ইলমের ছুটি নেই, আছে সাময়িক অবসর-যাপন মাত্র। তারা তো ছুটি কাটাবে আলমে বারযাখের দীর্ঘ সফরে।’

কাওমী মাদরাসাসহ দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে কুরবানির ছুটি শুরু হয়েছে। কেউ ঈদের দুই তিন দিন আগে, আবার কেউ কাল বা আজ ছুটি পেয়েছে। সে প্রেক্ষিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তোমরা একটা বিশেষ ছুটি পেয়েছ। এটাকে বিশেষ ছুটি বলা হলেও সপ্তাহ বা দশদিন দীর্ঘ হওয়ায় এটা কিছুটা ভীতিরও।
তালিবুল ইলমের বেলাগাম ছুটি নিয়ে আমাদের ভয় হয়। কারণ ছুটি কোনো আনন্দ বিনোদন বা সুখের নয়; এটা ভয়-আতঙ্ক, হতাশা এবং বেদনার। এমন ছুটিতে অনেক তালিবুল ইলমকে ছিটকে পড়তে হয় নবুবী ইলমের সোনালি পাঠ থেকে। এ জন্য এক দিক থেকে এটা কোনো ছুটি নয়; ইলম-আমলশূন্য ক্ষতিকর পরিবেশের কারণে এটাকে বিপদের পূর্বাভাসও বলা যায়।

আমাদের উস্তাদগণ বলেছেন— এটা বিষাক্ত ছুটি; তবে এ ছুটির ভালো-খারাপ নির্ভর করছে নবুবী ইলমের শিক্ষার্থীদের ঈমান-আমল ধরে রাখার উপর। কারণ মাদরাসায় উস্তাদের কোমল ছায়ায় তালিবুল ইলমের ভোররাতগুলো ছিল তিলাওয়াতে কুরআনের সুরে ছন্দময়, ইলমের নূরে আলোময়।
এ ছুটির ভেতর হয়তো কেউ চিরদিনের ছুটি নিয়ে পাড়ি জমাতে পারো পরজীবনে। হয়তো এটাই জীবন ও যৌবনের শেষ পাঠ। এমনকি আমার পক্ষ থেকেও তোমার প্রতি জীবনের শেষ বার্তা।

একেকটা ছুটি শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আতঙ্ক তৈরি করে, গুরুমনে অনাকাঙ্ক্ষিত হতাশার সঞ্চার করে। আমি সবসময় স্নেহের ছাত্রদের বলে থাকি—
‘তোমরা প্রাতিষ্ঠানিক ছুটিকে মৃত্যুর মত ভয় করো; কারণ এ ছুটির অপব্যবহার একজন তালিবুল ইলমের জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়, নিজের অজান্তে পরিবার ও অভিভাবকের দৃষ্টির আড়ালে ডেকে আনে অনাকাঙ্ক্ষিত পদস্খলন। এছাড়াও বাড়িতে কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি দরসি কিতাব ও নবী সাহাবিদের জীবনী বেশি পাঠ করো। তরুণদের মধ্যে যারা লেখালেখি করতে চাও তারা আদীব হুজুরসহ খ্যাতিমান আলেম লেখকদের বই পাঠ করো। দিন শেষে রোযনামচা লিখে ডায়েরির পাতা সমৃদ্ধ করো। মোবাইল ব্যবহার (বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া) এবং অসৎ সঙ্গ থেকে একশ হাত দূরে থাকো।’

তালিবুল ইলম!
উস্তাদগণ ছাত্রদের কাছে ডেকে বাড়ির কাজের বিষয়ে যে পরামর্শগুলো দিয়েছেন সেগুলো পরিপূর্ণ মেনে চলার চেষ্টা করা— সর্বাবস্থায় ওযুর সাথে থাকা। নামায কখনও কাজা না করা৷ ঘরে বসে কুরআন তিলাওয়াত করা। ভোর-রাতে তাহাজ্জুদ পড়া। বিশেষ প্রয়োজনে রোজা রাখা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। সুন্নাতগুলো সর্বদা আমলে রাখা। বেশি বেশি দুরুদ, ইস্তেগফার ও জিকির করা।।

তালিবুল ইলম!
আমাদের উস্তাদরা ছুটি উদযাপনে মাঝে মধ্যে পরামর্শ দিতেন—
‘বাড়ি থেকে হাট-বাজার বা দোকানে বেশি বের না হয়ে বাবা-মায়ের খেদমত করা, দীনি বিষয়গুলো নিয়ে সময়-বুঝে তাদের সাথে আলোচনা করা, কেয়ামতের পূর্বাভাসগুলো শুনিয়ে দেওয়া, নিজেরা কখনও গীবত, মিথ্যাচার, শেকায়েত বা কোনো হিংসা-বিদ্বেষে না জড়ানো, এলাকায় খারাপ ছেলেদের সঙ্গ না দেওয়া এবং বিশেষ কোনো প্রয়োজনে বাইরে গেলেও দ্রুত ঘরে ফিরে আসা।’

সুতরাং তোমরা যেন জীবনফুলের বিষে আক্রান্ত না হও— সেজন্য বুকভরা দরদ আর সাগর সমান ব্যথা নিয়ে আমরা সবসময় দোয়া করি। সোনালি হরফের জীবন নিয়ে তোমরা আজ থেকে সুন্দর পরিশুদ্ধ ও মির্মল পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখো। তোমাদের ইলমী জীবন আর ছুটি উদযাপন কাসেমী সোহবতের স্নিগ্ধতায় পূর্ণতা লাভ করুক । ছুটি বা অবসরগুলো— অচেনা পাপের বিষাক্ত গন্তব্যে হারিয়ে যাওয়ার কারণ না হোক। আল্লাহ সহায় হোন!

লেখক:
সম্পাদক, কলমসৈনিক
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম

Jubokantho24 Ad
এ জাতীয় আরো সংবাদ
এ জাতীয় আরো সংবাদ