চুক্তি অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিচ্ছে না ইসরায়েল!

ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তির অধীনে মুক্তি পাওয়া অনেক ফিলিস্তিনি বন্দীর পরিবারে আনন্দের পাশাপাশি নেমে এসেছে গভীর হতাশা। কারণ, তাঁরা জানতে পেরেছেন যে, তাঁদের প্রিয়জনদের ফিলিস্তিনে নয়, বরং তৃতীয় কোনো দেশে নির্বাসিত করা হবে।

ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সোমবার বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়া অন্তত ১৫৪ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে ইসরায়েল নির্বাসনে যেতে বাধ্য করবে।

 

আজ গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ২০ জন ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। এর বিপরীতে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের বৃহত্তর দলের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ২৫০ জন এবং গত দুই বছরে গাজা থেকে আটক প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের মতে, এঁদের অনেককে ‘গুম’ করা হয়েছিল।

মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের কোথায় পাঠানো হবে, সে সম্পর্কে ইসরায়েল এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে গত জানুয়ারিতে বন্দী মুক্তির সময় কয়েক ডজন বন্দীকে তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও তুরস্কের মতো বিভিন্ন দেশে নির্বাসিত করা হয়েছিল।

পর্যবেক্ষকরা এই জোরপূর্বক নির্বাসনকে মুক্তি পাওয়া বন্দীদের নাগরিকত্বের অধিকারের লঙ্ঘন এবং বন্দী বিনিময় চুক্তির ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতির প্রমাণ বলে উল্লেখ করেছেন।

 

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের পাবলিক পলিসির সহযোগী অধ্যাপক তামার কারমুত আল-জাজিরাকে বলেন, “ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ যে অবৈধ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটি অবৈধ, কারণ তাঁরা ফিলিস্তিনের নাগরিক… তাঁদের একটি ছোট কারাগার থেকে বের করে একটি বড় কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।” তিনি এই পদক্ষেপকে অমানবিক বলেও বর্ণনা করেন।

 

অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বন্দী মুহাম্মদ ইমরান-এর পরিবার নির্বাসনের খবর জেনে হতবাক। তাঁর ৪৩ বছর বয়সী ভাই মোহাম্মদ ইমরানকে মুক্তি দেওয়া হবে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফোন করে এমন আশ্বাস দিলেও, পরে পরিবারটি জানতে পারে যে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার এবং ১৩টি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মুহাম্মদকে নির্বাসিত করা হবে।

 

মুহাম্মদ ইমরানের ভাই রায়েদ ইমরান হতাশ হলেও বলেন, “আজকের খবরটি বড় এক ধাক্কা ছিল। তবে আমরা এখনো অপেক্ষা করছি। হয়তো কোনোভাবে আমরা তাঁকে দেখতে পাব। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি মুক্তি পাচ্ছেন, দেশে হোক বা বিদেশে।”

 

তবে এই নির্বাসনের অর্থ হলো, সীমান্তের ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণের কারণে ইমরানের পরিবার হয়তো বিদেশে গিয়ে কখনো তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারবে না।

 

 

বিশ্লেষক কারমুতের মতে, এই নির্বাসনের উদ্দেশ্য একাধিক: হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকে এই চুক্তি থেকে কোনো ধরনের প্রতীকী বিজয় দাবি করা থেকে বঞ্চিত করা।

 

নির্বাসিত বন্দীদের রাজনৈতিক বা অন্যান্য কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখা, কারণ তাঁদের নতুন দেশে কঠোর সীমিত চলাচলের মধ্যে থাকতে হবে।

 

কারমুত আরও বলেন, “এটা ইসরায়েলের জন্য দুদিকেই লাভ,” কারণ মুক্তিপ্রাপ্ত ইসরায়েলি বন্দীরা তাঁদের দেশে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন, কিন্তু ফিলিস্তিনিরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার হচ্ছেন। তিনি এই নীতিকে “ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়” বলে উল্লেখ করেন।

Jubokantho24 Ad
এ জাতীয় আরো সংবাদ
এ জাতীয় আরো সংবাদ