রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সের শিক্ষার্থীর পরিচয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান আসাদুল্লা-হিল-গালিব। তবে এবার বেরিয়ে এলো এই সাধারণ সম্পাদকের আসল রহস্য; জানা গেল তিনি আসলে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নন। শিক্ষার্থী না হয়েও মিথ্যা ও জালিয়াতি করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পরিচয় দিতেন তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল্লা-হিল-গালিব ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভুয়া সনদে’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। যেটি আংশিক ও অসম্পূর্ণ তথ্য।
প্রকৃতপক্ষে আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব এ বিভাগের শিক্ষার্থী নয়। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জুলাই ২০২১ সেশনের ছাত্র (আইডি নং: ২৩১০০৪৬২১০) হিসেবে ভর্তির আবেদন করেছিলেন। তবে তার অনার্সের সার্টিফিকেটে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষয়টি যাচাইপূর্বক ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জরুরি সভায় উক্ত শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এইচএসসি পাস করে ২০১৪-১৫ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পর প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষ টপকাতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউট হন গালিব।
তবে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের শীর্ষ পদ পেতে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পাসের ভুয়া সনদ বানিয়ে সেটি দেখিয়ে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সে আবেদন করেন। তিনি এতোদিন এ বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলেও তিনি এ বিভাগের শিক্ষার্থী না জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
এদিকে, গত ২১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট রাবি ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর এ কমিটিতে তাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তার বাড়ি নওগাঁ জেলার প্রসাদপুর এলাকায়। তবে সকলের মনে প্রশ্ন ইন্টার পাশ করা ছেলে কিভাবে ছাত্রলীগের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুল্লা-হিল-গালিবের ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, একটা শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হলে, এটা সাধারণত বাইরে জানানো হয় না। এটা সম্পূর্ণ বিভাগের ইন্টারনাল বিষয়। যেহেতু এর আগে বেশকিছু গণমাধ্যমে আসাদুল্লা-হিল-গালিবের এই বিষয়টি এসেছে। অনেকেই এ বিষয়ে পুরোপুরি সত্যটা জানে না। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে, বিভাগের জায়গা থেকে এটি ক্লিয়ার করা দরকার। সেজন্য গণমাধ্যম কর্মীদের সঠিক তথ্যটা জানিয়ে রাখলাম।
এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম শাকিল বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। আমি আগামীকাল বিজ্ঞপ্তির কপিটি প্রিন্ট করে দপ্তর সেলে জমা দিবো। হয়তো এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হতে পারে। সত্যতা প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অছাত্রদের জন্য ছাত্রলীগে জিরো টলারেন্স জারি করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ফোন রিসিভ করলে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথেই ফোন কেটে দেন। এরপর কল দিলে আর ফোন রিসিভ করেননি।