
সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার হাজার হাজার মানুষের মরদেহ একটি গণকবর থেকে সরিয়ে অন্য একটি গোপন স্থানে লুকিয়ে ফেলার জন্য দুই বছর ধরে এক বিশাল গোপন অভিযান পরিচালনা করে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চালানো এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল গণহত্যার প্রমাণ মুছে ফেলা এবং আন্তর্জাতিক ভাবে নিজের ভাবমূর্তি পুনপুরুদ্ধার করা । বার্তা সং স্থা রয়টারর্সে এক বিশেষ অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ।
“অপারেশন মুভ আর্থ” নামে পরিচিত এই অভিযানে দামেস্কের কাছের কুতায়ফাহ অঞ্চলের একটি গণকবর থেকে মরদেহগুলো তুলে মরুভূমির ধুমাইর নামক এলাকার একটি নতুন গোপন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। রয়টার্সএই অভিযানে সরাসরি জড়িত ১৩ জনের সাক্ষাৎকার, সংশ্লিষ্ট নথি এবং স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে নতুন এই গণকবরের অবস্থান শনাক্ত করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ধুমাইরের নতুন এই গণকবরে অন্তত ৩৪টি পরিখা রয়েছে, যা প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ। সাক্ষী ও পরিখার আয়তন বিবেচনা করে ধারণা করা হচ্ছে, এখানে কয়েক হাজার মরদেহ সমাহিত করা হয়েছে। কুতায়ফাহ গণকবরে মূলত আসাদের কারাগার ও সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণকারী সৈনিক এবং বন্দীদের দেহাবশেষ ছিল, যা ২০১৪ সালে ফাঁস হওয়া
ছবির মাধ্যমে প্রথম প্রকাশ্যে আসে।
এই গোপন অভিযানটি প্রতি সপ্তাহে প্রায় চার রাত ধরে চলত। ৬ থেকে ৮টি ট্রাকে করে মাটি ও দেহাবশেষ কুতায়ফাহ থেকে ধুমাইরে নিয়ে যাওয়া হতো। আসাদ সরকারের পতনের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক কর্মকর্তারা এই অভিযানের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে নিজেদের ভাবমূর্তিস্বচ্ছ করা। সিরিয়ার নতুন সরকার নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নিখোঁজ প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের পরিবার এখনও তাদের প্রিয়জনের সন্ধানে অপেক্ষারত। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মরদেহ এভাবে বিশৃঙ্খলভাবে স্থানান্তর করার ফলে তাদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল।
অভিযানে অংশ নেওয়া একজন চালক রয়টার্সকে জানান, সে সময় ভয়ের পরিবেশ এতটাই তীব্র ছিল যে আদেশ অমান্য করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না। তিনি বলেন, “আপনাকে হয়তো সেই গর্তেই ফেলে দেওয়া হতো।”